গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব (Achievements of Harshavardhana) ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা | Achievements of Harshavardhana
প্রাচীন ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর দীর্ঘদিন উত্তর-পূর্ব ভারতে কেন্দ্রীয় রাজশক্তির অভাবে সমসাময়িক পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে সম্রাট হর্ষবর্ধন তার অসাধারণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও রনকৌশলের মাধ্যমে উত্তর পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে সক্ষম হয়।
হর্ষবর্ধনের সভাকবি বানভট্টের রচিত গ্রন্থ হর্ষচরিত এবং চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ -এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ও বিভিন্ন শিলালিপি থেকে সম্রাট হর্ষবর্ধনের কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
Harshavardhana
এখানে সম্রাট হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব (Achievements of Harshavardhana) আলোচনা করা হল –
1. রাজ্য বিস্তার
সিংহাসনে আরোহণের পর হর্ষবর্ধন কনৌজের আমাত্যদের অনুরোধে কনৌজের শাসনভার গ্রহণ করেন। হর্ষবর্ধন অসামান্য দক্ষতার ও রণকৌশল এর ফলে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন। গৌড়রাজ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর হর্ষবর্ধন মগধ, ওড়িশা এবং বাংলা দখল করেন।
হর্ষবর্ধন পূর্বভারতের বিভিন্ন রাজ্য জয়লাভ করেন। পরবর্তীকালে পশ্চিমে সৌরাষ্ট্রের বলভি রাজ্য আক্রমণ করেন এবং সেখানকার রাজা ধ্রুবসেনকে পরাজিত করেন। বিশিষ্ট পন্ডিত বানভট্টের মতে – হর্ষবর্ধন নেপাল ও কাশ্মীর রাজ্য জয় করেন। তবে এ সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়।
পূর্ব ভারত এবং পশ্চিম ভারতের পর হর্ষবর্ধন দক্ষিণ ভারতে রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী হন। কিন্তু চালুক্য সম্রাট দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে হর্ষবর্ধন পরাজিত হন এবং দক্ষিণ ভারতের রাজ্য বিজয়ের পরিকল্পনা পরিত্যাগ করেন।
হর্ষবর্ধনের রাজত্ব বিস্তার সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মতামত পোষণ করেন। তবে অনেকে হর্ষবর্ধনকে ‘সকল উত্তরপথনাথ’ বলে অভিহিত করেন।
2. শাসন ব্যবস্থা
সম্রাট হর্ষবর্ধনের আমলে রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা ছিল সুশাসিত। চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ -এর বিবরণী থেকে হর্ষবর্ধনের পরম ধর্মসহিষ্ণুতা ও দানশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
হর্ষবর্ধন নিজে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিভ্রমণ করতেন এবং শাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তত্ত্বাবধান করতেন। হর্ষবর্ধনের রাজধানী ছিল কনৌজ। এই রাজধানী অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী এবং জনবহুল ছিল। হিউয়েন সাঙ তাঁর বিবরণীতে হর্ষবর্ধনের রাজকর্তব্যবোধের খুবই প্রশংসা করেছিলেন। হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে দেশে ভূমিরাজস্ব ও অন্যান্য করের পরিমাণ সামান্য ছিল। এর ফলে সাধারণ জনগণ খুবই উপকৃত হতেন।
অনেক ঐতিহাসিকবিদ হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছিল বলে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন রাজ্যে চোর ডাকাতের উপদ্রব থাকায় তখনকার ফৌজদারি আইন অত্যন্ত কঠোর ছিল।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক রোমিল থাপার বলেছেন ‘হর্ষবর্ধন মৌর্য সম্রাটদের মতো কোনো কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারেননি।’
3. সাহিত্য, শিল্পকলা ও ভাস্কর্যের বিকাশ
রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি হর্ষবর্ধন সংস্কৃতির উত্তরণ ঘটিয়েছিলেন। অর্থাৎ সাহিত্য, শিল্পকলা ও ভাস্কর্য শিল্পের বিস্তার সাধনে হর্ষবর্ধনের অসামান্য অবদান পাওয়া যায়। তাই শিক্ষা ও সংস্কৃতির দিক থেকে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়।
ইতিহাসিকদের মতে হর্ষবর্ধন নিজেই শিক্ষা ও সাহিত্যের বিশেষ অনুরাগী ও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। হর্ষবর্ধনের রচিত নাগনন্দা, রত্নাবলী ও প্রিয়দর্শিকা প্রভৃতি গ্রন্থ বিশেষ অর্জন করে।
4. সুদক্ষ শাসক
হর্ষবর্ধন ছিলেন সুদক্ষ শাসক। তার শাসনকালে সাম্রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় ছিল। অর্থাৎ উত্তর ভারতের দীর্ঘকালব্যাপী অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা এবং রাজনৈতিক অশান্তির অবসান ঘটিয়ে উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য এবং অখন্ডতা অনেকাংশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে সম্রাট অশোকের পর হর্ষবর্ধনের মতো প্রজাবৎসল রাজার দৃষ্টান্ত খুবই কম পাওয়া যায়। দীর্ঘ ৪০ বছর ব্যাপী তার শাসনকালে উত্তর ভারত স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। সম্রাট অশোকের মতো প্রজাদের সুবিধার জন্য রাজা হর্ষবর্ধন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসালয় ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করেছিলেন। তাই বিশিষ্ট ঐতিহাসিক বলিনসন বলেছেন – সম্রাট অশোক ও আকবরকে বাদ দিলে হর্ষবর্ধন ছিলেন ভারতের শ্রেষ্ঠ নরপতি।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Achievements of Harshavardhana in points
- Online Sources
প্রশ্ন – হর্ষবর্ধন কোন বংশের রাজা ছিলেন
উত্তর – হর্ষবর্ধন ছিলেন থানেশ্বরের পুষ্যভূতি বংশের অন্যতম বিশিষ্ট রাজা।
প্রশ্ন – হর্ষবর্ধন কোথাকার রাজা ছিলেন
উত্তর – হর্ষবর্ধন থানেশ্বরের রাজা ছিলেন।
প্রশ্ন – হর্ষবর্ধনের উপাধি কি ছিল
উত্তর – হর্ষবর্ধনের উপাধি ছিল শিলাদিত্য। হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে এই শিলাদিত্য উপাধি বহুল ব্যবহৃত হতো।
প্রশ্ন – হর্ষবর্ধন কত খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন
উত্তর – সম্রাট হর্ষবর্ধন আনুমানিক ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন এবং তিনি ৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর রাজত্ব করেন। অর্থাৎ তিনি সপ্তম শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট শাসক ছিলেন।
প্রশ্ন – থানেশ্বরের রাজা কে ছিলেন?
উত্তর – থানেশ্বরের রাজা ছিলেন সম্রাট হর্ষবর্ধন।
প্রশ্ন – হর্ষচরিত কে রচনা করেন
উত্তর – হর্ষচরিত রচনা করেন হর্ষবর্ধনের বিশিষ্ট সভাকবি বানভট্ট।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব আলোচনা | Achievements of Harshavardhana সম্পূর্ণ পোস্টটি করার জন্য ধন্যবাদ।