ভারতবর্ষের সাতবাহন সাম্রাজ্যের একজন সুশাসক হলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী। সাতবাহন সাম্রাজ্যের গৌরব পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর কৃতিত্ব (Achievements of Gautamiputra Satakarni) ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের পর পশ্চিম ভারতে সাতবাহন বংশের আদিবাসভূমি ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে – সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা সিমুক কান্ব বংশের শেষ রাজা সুশবর্মণকে পরাজিত করে দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। সাধারণত খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে সাতবাহন বংশের সূত্রপাত হয়েছিল। সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠাতা শিমুকে রাজধানী ছিল গোদাবরি নদীর তীরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান নগরী (বর্তমানে ঔরঙ্গাবাদ জেলার পৈথানে এটি অবস্থিত)।
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী কৃতিত্ব আলোচনা | Achievements of Gautamiputra Satakarni
সাতবাহন বংশের ত্রয়োবিংশ সম্রাট ছিলেন গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী। বৈদেশিক শক জাতির একটি শাখা সাতবাহন সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করে নিলে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী সাতবাহন সাম্রাজ্যের গৌরব পুনরুদ্ধার করেন।
গৌতমিপুত্র সাতকর্ণী আনুমানিক ১০৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন এবং তিনি ১৩০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুশাসক হিসেবে সাতবাহন সাম্রাজ্য অক্ষুন্ন রাখেন।
Gautamiputra Satakarni
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী কৃতিত্ব (Achievements of Gautamiputra Satakarni) যে সমস্ত দিক থেকে বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –
1. দক্ষ শাসক ও সমাজ সংস্কারক
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী সাতবাহন বংশের গৌরব পুনরুদ্ধার করেন। তাঁর সময়ে সাতবাহন সাম্রাজ্যের শক্তি ও পতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। তাই সুশাসক এবং সমাজ সংস্কার হিসেবে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর অবদান উল্লেখযোগ্য। ধর্মশাস্ত্রে নির্দেশিত রাজ কর্তব্য পালনের উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করতেন।
তাছাড়া গণতান্ত্রিক কাঠামোয় তিনি রাজ্য পরিচালনা করতেন। তাঁর রাজ্যে গণতান্ত্রিক কাঠামোয় রাজার স্থান ছিল সর্বোচ্চ, তার নিচে ছিল মহাভোজ এবং সেনাপতি। গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী প্রজাবৎসল শাসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
2. রাজ্য বিস্তার
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী উত্তরে বিন্ধ পর্বত থেকে দক্ষিনে ত্রিবাঙ্কুর পর্যন্ত এবং পশ্চিমে পশ্চিমঘাট থেকে পূর্বে পূর্বঘাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সাম্রাজ্য বিস্তার করেন।
গৌতমী বালাশ্রী রচিত ‘নাসিক প্রশস্তি’ থেকে জানা যায় – গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা হ্রাস করে ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
3. ভারতীয় সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষা
ভারতীয় সংস্কৃতির ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাতবাহন বংশ তথা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর অসামান্য কৃতিত্ব পাওয়া যায়। বিদেশি জাতিদের আক্রমণ থেকে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী বিশেষভাবে রক্ষা করেছিলেন।
তাছাড়া সাতবাহন সাম্রাজ্যে অমরাবতী ও নাগার্জুন কোন্ডা প্রভৃতি স্থানের যেসব স্থাপত্য তৈরি হয়েছিল তা দক্ষিণ ভারতীয় শিল্পকলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
4. আর্য সভ্যতার প্রসার
আর্য সভ্যতার প্রসারের ক্ষেত্রে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর কৃতিত্ব পরিলক্ষিত হয়। দক্ষিণ ভারতের নতুন রাজ্য সভ্যতার প্রসার সাতবাহন যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ভারতের এক বিরাট অঞ্চলে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী উত্তর ভারতের রাজ্য সভ্যতা ও দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতার মধ্যে এক বিস্ময়কর সমন্বয় সাধন করেছিলেন।
5. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি
সাতবাহন শাসনকালে ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য শিল্পজাত পণ্যের ব্যাপক উৎপাদন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর শাসনকালে নগর জীবনের এক অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে। যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করেছিল।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর কৃতিত্ব ছিল অসামান্য। তাই গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীকে সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর পরবর্তী উল্লেখযোগ্য সাতবাহন রাজারা ছিলেন বশিষ্টপুত্র পুলুমায়ী ও যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণী। পরবর্তীকালে উপযুক্ত সাতবাহন সম্রাটদের অভাবে সাতবাহন সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয় এবং পহ্লব ও বকাটদের ক্রমাগত আক্রমণে সুবিশাল সাতবাহন সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Achievements of Gautamiputra Satakarni
- Online Sources
প্রশ্ন – নাসিক প্রশস্তি কে রচনা করেন
উত্তর – নাসিক প্রশস্তি রচনা করেন গৌতমী বালাশ্রী। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। নাসিক প্রশস্তি থেকে গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর কৃতিত্ব ও সাম্রাজ্য বিস্তার সম্পর্কে বহুল তথ্য পাওয়া যায়।
প্রশ্ন – গৌতম পুত্র সাতকর্ণী কে ছিলেন?
উত্তর – গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী ছিলেন সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতি। গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী সাতবাহন বংশের ত্রয়োবিংশ সম্রাট ছিলেন।
প্রশ্ন – গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী উপাধি কি?
উত্তর – গৌতমীপুত্র সাতকর্ণী উপাধি ছিল একব্রাহ্মণ। অর্থাৎ তিনি ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা হ্রাস করে ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং একব্রাহ্মণ উপাধি নিয়েছিলেন। আবার অনেকের মতে তিনি দক্ষিণাপতি উপাধি ধারণ করেন।
প্রশ্ন – সাতবাহন দের মুদ্রার নাম কি?
উত্তর – সাতবাহন দের মুদ্রার নাম ছিল ‘সাতকর্ণি’ এবং ‘পুলুমাভি’।
প্রশ্ন – গৌতমী বলশ্রী কি রচনা করেছিলেন
উত্তর – গৌতমী বলশ্রী ‘নাসিক প্রশস্তি’ রচনা করেছিলেন।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- মানব বিবর্তনের ইতিহাস বা পর্যায় সমূহ | History of Human Evolution
- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রশ্ন উত্তর | Fort William College Quiz Question and Answers
- বাংলা গদ্য সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান | Contribution of Serampore Mission to Bengali Prose
- বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান | Contribution of Fort William College Bengali Prose
- বাংলা গদ্য সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা | Vidyasagar Contribution to Bengali Literature
- বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের অবদান | Raja Ram Mohan Roy in Prose Literature
গৌতমীপুত্র সাতকর্ণীর কৃতিত্ব আলোচনা করো | Achievements of Gautamiputra Satakarni সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।