লেখ্যাগার বা মহাফেজখানায় কেবলমাত্র তথ্য বা নথি সংগৃহীত ও সংরক্ষিত থাকে না। বরং লেখ্যাগারের কার্যাবলী (Function of Archives in History) বিভিন্ন প্রকারের বা বহুমুখী হয়ে থাকে।
লেখ্যাগারের কার্যাবলী | Function of Archives
লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা হল এমন জায়গা যেখানে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগৃহীত ও সংরক্ষণ থাকে এবং প্রয়োজন অনুসারে বহুদিন পরও ব্যবহার করা যায়। লেখ্যাগার বা মহাফেজখানায় কেবলমাত্র নথি সংগৃহীত ও সংরক্ষণ থাকে না, বরং এর কাজ বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
Function of Archives in History
লেখ্যাগারের কার্যাবলী যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –
1. নথি বা ডকুমেন্ট সংগ্রহ
লেখ্যাগারের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথি বা দলিল সংগ্রহ করা। তবে সংগ্রহশালার কার্যাবলীতে যেখানে বিভিন্ন বস্তু সংরক্ষিত থাকে, সেখানে লেখ্যাগারের মধ্যে ঐতিহাসিক সরকারি নথি বা দলিল সংরক্ষিত ও সঞ্চিত থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষামূলক সংস্থা বা বাণিজ্যিক সংস্থা তাদের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নথি নিজস্ব লেখ্যাগারে সঞ্চিত রাখে। চলচ্চিত্র, সংগীত প্রভৃতি লেখ্যাগারগুলি ফিল্ম, সিডি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে।
2. নথি লিপিবদ্ধকরণ
লেখ্যাগারের কার্যাবলীর মধ্যে অন্যতম হল নথি লিপিবদ্ধকরন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সংগৃহীত নথির যাবতীয় তথ্যগুলি যথাযথভাবে লিপিবদ্ধকরণ বা তালিকাভুক্তকরন করা হয়, যাতে ভবিষ্যতের সহজে সেই নথি সংগ্রহ ও ব্যবহার করা যায়।
নথি লিপিবদ্ধকরণের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়, সেগুলি হল –
ক) নথি সংগ্রহ সংক্রান্ত বিষয় – নথি সংগ্রহ সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যে যে সমস্ত বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং লিপিবদ্ধ করা হয় সেগুলি হল –
i) নথি সংগ্রহের তারিখ
ii) নথি সংগ্রহ স্থান বা ঠিকানা
iii) নথি সংগ্রহকারী নাম
iv) নথি লিপিবদ্ধকরণের নম্বর এবং নথি লিপিবদ্ধকারীর নাম সংক্রান্ত বিষয় প্রভৃতি।
খ) নথির বিবরণ সংক্রান্ত তথ্য – এক্ষেত্রে নথির যাবতীয় বিবরণ উল্লেখ থাকে। যেমন – নথির নাম, নথি কোন বস্তু বা কি দিয়ে তৈরি (যেমন – কাগজ, তাল পাতা, মাটি, কাঠের উপকরণ প্রভৃতি), এবং নথির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, ওজন, পৃষ্ঠা সংখ্যা প্রভৃতি।
তাছাড়া নথির অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ থাকে। যেমন – নথির অবস্থান, কক্ষের নাম, আলমারির নাম, কোন ঘরে রয়েছে, কত নম্বর বা কোন জায়গায় রয়েছে প্রভৃতি তথ্য সুন্দর ভাবে লিপিবদ্ধ করা লেখ্যাগারের অন্যতম কার্যাবলী।
3. নথি সংরক্ষণ
লেখ্যাগারের কার্যাবলীর অন্যতম কার্যাবলী হল নথি সংরক্ষণ করা। কারণ নথি গুলি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না হলে তা ভবিষ্যতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা হারিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ নথি বা পাণ্ডুলিপি যেরকম ধর্মের হোক না কেন সেই অনুযায়ী যথাযথভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা বা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা লেখ্যাগারের অন্যতম কার্যাবলী। তাই প্রাকৃতিক কারণ, জৈবিক কারণ, রাসায়নিক কারণ, মনুষ্যসৃষ্ট কারণ প্রভৃতির হাত থেকে নথিগুলি রক্ষা করা লেখ্যাগারের কার্যাবলী অন্তর্গত।
4. নথি ব্যবস্থাপনা
লেখ্যাগারের কার্যাবলী হল সংগৃহীত নথিগুলিকে যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করে। যাতে ন নথি গুলি দীর্ঘদিন সুরক্ষিতভাবে অক্ষত থাকে এবং ব্যবহারের উপযোগী হয়ে ওঠে। সেই জন্য নথি সংরক্ষণের স্থান খুব ভালোভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
5. নথি প্রদর্শন এবং প্রকাশনা
অনেক সময় সংগ্রহশালার মত লেখ্যাগারের নথিগুলিকে জনসাধারণের সামনে প্রদর্শন বা প্রকাশনা করা হয়। অর্থাৎ সংগৃহীত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দলিল বা পান্ডুলিপি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনসাধারণের সামনে নিয়ে আশা হয় এবং সরকারি উদ্যোগে বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুস্তকের মাধ্যমে প্রকাশনার ব্যবস্থা থাকে।
লেখ্যাগারের মধ্যে সংরক্ষিত নথি গুলি অনেক সময় স্থায়ীভাবে প্রদর্শন এবং অস্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকে। আবার এই সমস্ত নথিগুলি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী গবেষণা করে। ফলে গবেষণা সংক্রান্ত কাজের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
তবে এক্ষেত্রে ওই সমস্ত নথিগুলি খুবই সুরক্ষার সাথে ও সাবধানতা অবলম্বন করে ব্যবহার করা হয় এবং কোনো অবস্থাতেই বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। ভারতের জাতীয় অভিলেখ্যাগার ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন বিষয় ‘মার্চ টুওয়ার্ডস ফ্রিডম’ নামক (১৯১৯ থেকে ১৯৪৭ সাল) প্রদর্শনীর মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরে।
আবার এই ‘জাতীয় অভিলেখ্যাগার’ দ্বারা ১৯৪২ সালে ইন্ডিয়ান হিস্টোরিকাল রেকর্ড কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ‘দ্য ইন্ডিয়ান আর্কাইভ’ নামে একটি দ্বি বার্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত করেন। তাই লেখ্যাগারের কার্যাবলীর মধ্যে নথি প্রদর্শন এবং প্রকাশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, লেখ্যাগার হলো এমন স্থান যেখানে ব্যক্তিগত, সরকারি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দলিল, পান্ডুলিপি বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি যথাযথভাবে সংগৃহীত হয় এবং সুরক্ষিত রাখা হয়। যাতে ভবিষ্যতে সেই নথিগুলিকে সহজে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায়। তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন নথি প্রাকৃতিক বা অন্যান্য ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করার জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ নথিগুলিকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – Archive এর কাজ কি?
উত্তর – Archive এর কাজ হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ এবং দুষ্প্রাপ্ত নথি সংগ্রহ ও সংরক্ষিত করা। যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আর্কাইভ বা লেখ্যাগার হল ঐতিহাসিক নথি সংরক্ষণের স্থান।
প্রশ্ন – আর্কাইভ এর প্রধান কাজ কি?
উত্তর – আর্কাইভ এর প্রধান কাজ হল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নথি বা দলিল বা পাণ্ডুলিপি যথাযথভাবে সংরক্ষণ।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- মানব বিবর্তনের ইতিহাস বা পর্যায় সমূহ | History of Human Evolution
- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রশ্ন উত্তর | Fort William College Quiz Question and Answers
- বাংলা গদ্য সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান | Contribution of Serampore Mission to Bengali Prose
- বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান | Contribution of Fort William College Bengali Prose
- বাংলা গদ্য সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা | Vidyasagar Contribution to Bengali Literature
- বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়ের অবদান | Raja Ram Mohan Roy in Prose Literature