মানব সভ্যতার বিকাশের ধারার তিনটি যুগ বর্তমান। এই তিনটি যুগের মধ্যে নব্য প্রস্তর যুগ একটি অন্যতম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি (Characteristics of Neolithic Age) অন্যান্য যুগের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং নতুনত্ব বর্তমান।
প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং মধ্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ হিসাবে চিহ্নিতকরণ করা হয়ে থাকে। এই যুগের মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন সূচিত হয়।
নব্য প্রস্তর যুগ কাকে বলে
প্রাচীন প্রস্তর যুগ এবং মধ্য প্রস্তর যুগের অবসানের সাথে সাথে নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়। অর্থাৎ প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও মধ্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলে। এটি নবাশ্মীয় যুগ (Neolithic Age) নামেও পরিচিত।
ঐতিহাসিকগণের মতে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 8000 বছর থেকে 4000 বছর সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা হয়। পশ্চিম এশিয়ার জেরিকোতে নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে।
আবার, ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে নব্য প্রস্তর যুগের সূচনা খ্রিস্টপূর্ব 7000 বছর সময়কাল থেকে। পাকিস্তানের অন্তর্গত মেহেরগড়ে নব্য প্রস্তর যুগের প্রাচীনতম নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
Neolithic Age Picture
নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Neolithic Age
নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন পরিবর্তন সূচিত হয়। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল –
1. জীবনযাত্রার ধরন
প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও মধ্যপ্রস্তর যুগের জীবনযাত্রার ধারণা থেকে নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের জীবনযাত্রা ধরনের বিভিন্ন পরিবর্তন গত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ খাদ্য সংগ্রহ পর্ব থেকে খাদ্য উৎপাদক পর্বে পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এই স্তরে মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে। বিভিন্ন দানাশস্য মানুষ মাটিতে রোপন করে শস্য উৎপাদন বা কৃষি কাজের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে।
আনুমান 7000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতের অন্তর্গত মেহেরগড়ে কৃষি কাজের সূচনা হয়েছিল এবং এটি সম্ভবত প্রথমে যবের চাষের মাধ্যমে কৃষিকাজ শুরু হয়।
2. হাতিয়ারের আকৃতি ও ধরন
প্রাচীন ও মধ্য প্রস্তর যুগে হাতিয়ার ছিল অমসৃণ প্রকৃতির। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে হাতিয়ারের আকৃতি এবং ধরনের মধ্যে পরিবর্তন সূচিত হয়। এই সময়কালের মানুষেরা পাথরের হাতিয়ারকে আরোও মসৃণ ও ধারালো করে ব্যবহার করতে শেখে। এছাড়া মাটির খোঁড়ার জন্য বিভিন্ন হাতিয়ার নব্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা আবিষ্কার করেছিল।
3. বসতি স্থাপন
নব্য প্রস্তর যুগে মানুষেরা নিজস্ব বসতি স্থাপনে সক্ষম হয়ে ওঠে। অর্থাৎ তারা এক জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসের জন্য বসতি স্থাপন করার কৌশল আয়ত্ত করে।
অর্থাৎ নব্য প্রস্তর যুগে কৃষি উৎপাদন এবং পশুপালন শুরু করার ফলে মানুষ এক জায়গায় থাকার জন্য বসতি স্থাপন করেন।
4. চাকার আবিষ্কার
নব্য প্রস্তর যুগে মানুষেরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যাওয়ার জন্য চাকার আবিষ্কার করে। অর্থাৎ চাকার আবিষ্কার এই যুগের মানুষের সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল।
নব্য প্রস্তর যুগে চাকা ঘুরিয়ে মাটির পাত্র তৈরীর কৌশল মানুষ আয়ত্ত করে। যার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা মানের পরিবর্তন অনেকটা সূচিত হয়।
5. সমাধি প্রথা
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা মৃত মানুষকে কবর দেয়া বা সমাধি প্রথার কৌশল আয়ত্ত করে। এযুগের মানুষেরা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে বিশ্বাস করতেন। তাই মৃতদেহের সমাধিতে তার ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় জিনিস এবং নিত্য জীবনের নানা উপকরণ রেখে দিতেন। অনেক সময় মৃতদেহে লাল রঙের পোলেপ দেওয়া হতো।
6. শিল্প ভাবনা
নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের মধ্যে শিল্প ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। এযুগের মানুষেরা চাকা ঘুরিয়ে বিভিন্ন মাটির পাত্র বা মৃৎশিল্প নির্মাণ এই পর্বে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করে। তাই নব্য প্রস্তর যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল শিল্প ভাবনা।
এগুলি ছাড়াও নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Neolithic Age) যে সমস্ত দিক থেকে দেখা দেয়, সেগুলি হল –
i) নব্য প্রস্তর যুগে শ্রেণীবিভাগের সূচনা বা মানুষের কাজ অনুযায়ী সামাজিক বিভাজন শুরু হয়।
ii) কৃষি কাজের বিকাশ ঘটে
iii) স্থায়ী বসতি ভিত্তি করে গ্রাম ও সমাজের প্রতিষ্ঠা।
iv) নব্য প্রস্তর যুগেপাথরের হাতিয়ারের ব্যবহারের সাথে সাথে সর্বপ্রথম ধাতুর ব্যবহার শুরু হয়।
v) পাথরের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র এই যুগে তৈরি হয়। যেমন – পাথরের বাটি, লকেট পুঁতি প্রভৃতি
উপসংহার
নব্য প্রস্তর যুগ মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত করে। এই যুগের পরিবর্তন খুবই ব্যাপক এবং বিস্তৃত ছিল। এই কারণে এই যুগের মানুষের পরিবর্তনগুলিকে বিবর্তন বলা হয়ে থাকে। এই জন্য এই যুগকে নব্য প্রস্তর বিপ্লব বলা হয়েও থাকে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
- Characteristics of Neolithic Age
প্রশ্ন – কে এবং কেন প্রথম ‘নব্য প্রস্তর বিপ্লব’ শব্দটি ব্যবহার করেন?
উত্তর – নব্য প্রস্তর যুগে কৃষি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পশুপালন, বয়ন শিল্প, মাটির শিল্প প্রভৃতি বিকাশ লাভ করে। এই কারণে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড নব্য প্রস্তর বিপ্লব শব্দটি ব্যবহার করেন।
প্রশ্ন – নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলতে কী বোঝো
উত্তর – নব্য প্রস্তর যুগে কৃষি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে পশুপালন, মৃৎশিল্প, বয়ন শিল্প , প্রভৃতির বিকাশ লাভ করে। এই অগ্রগতির জন্য বিশিষ্ট গবেষক ও ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড ‘ নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব’ বলেছেন।
প্রশ্ন – Neolithic শব্দটি কে প্রথম ব্যবহার করেন
উত্তর – “Neolithic” শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ জন লুবক (Sir John Lubbock)। ১৮৬৫ সালে ‘Prehistoric Times’ নামক শীর্ষক গ্রন্থে তিনি এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। “Neolithic” শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ “neos” (নতুন) এবং “lithos” (পাথর) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল “নতুন পাথর যুগ”।
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
1 thought on “নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য | 6 Characteristics of Neolithic Age”