শিক্ষার আধুনিক লক্ষ্য হল পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীন বিকাশে সহায়তা করে। এই জন্য ডেলর কমিশনের আলোকে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য বা শিক্ষার চারটি স্তম্ভের (Delors Commission) পরিলক্ষিত হয়।
সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। আর এই পরিবর্তনশীল সমাজের সঙ্গে অভিযোজন করার ক্ষেত্রে শিক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার লক্ষ্য কি হবে তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী সম্মেলন হয়। এদের মধ্যে শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কিত ডেলর কমিশনের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
ডেলর কমিশনের আলোকে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য | Delors Commission on Education
আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য ১৯৯৬ সালে UNESCO -তে ফ্রান্সের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জ্যাক ডেলরের সভাপতিত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। যেটি শিক্ষাক্ষেত্রে ডেলর কমিশন নামে অধিক পরিচিত। কমিশন দীর্ঘ পর্যালোচনার পর বিশ্বব্যাপী শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সচেষ্ট হন।
আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য ডেলর কমিশন একটি প্রতিবেদন পেশ করেন। এই প্রতিবেদনটির নাম ছিল ‘Learning: The Treasure Within” অর্থাৎ শিখন: অন্তর্নিহিত সম্পদ।
ডেলর কমিশনের আলোকে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য (Delors Commission on Education) বা ডেলর কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী শিক্ষার চারটি স্তম্ভ গুলি আলোচনা করা হল –
i) জানার জন্য শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের শিক্ষা (Learning to Know)
ii) কর্মের জন্য শিক্ষা (Learning to Do)
iii) প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা (Learning to Be)
iv) একত্রে বসবাসের শিক্ষা (Learning to Live Together)
1. জানার জন্য শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের শিক্ষা (Learning to Know)
ডেলর কমিশনের আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হল জানার জন্য শিক্ষা বা জ্ঞানার্জনের শিক্ষা। এ পৃথিবী জ্ঞানের ভান্ডারের খনি। তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার লক্ষ্য হবে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা।
2. কর্মের জন্য শিক্ষা (Learning to Do)
ডেলর কমিশন অনুযায়ী শিক্ষার দ্বিতীয় এবং অন্যতম লক্ষ্য হল কর্মের জন্য শিক্ষা। কারণ শিক্ষার্থীরা কেবলমাত্র জ্ঞান অর্জন করবে না। বরং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কর্মের জন্য শিক্ষা আবশ্যিক। এর জন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন বৃত্তি শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত থাকা বিশেষ প্রয়োজন।
3. প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা (Learning to Be)
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কারণে মানুষের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ সমাজে প্রকৃত মানুষের অভাব রয়েছে। সেই কারণে ডেলর কমিশন শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য হিসাবে প্রকৃত মানুষ হওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অর্থাৎ শিক্ষার এই লক্ষ্যটি ব্যক্তিকে একজন সৎ ও নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে।
4. একত্রে বসবাসের শিক্ষা (Learning to Live Together)
বর্তমানে সমাজে বা ঘরে বাইরে সর্বত্র বিভিন্ন কারণে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করছে। সেই কারণে ডেলর কমিশন আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এই একত্রে বসবাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন, সৌভ্রাতৃত্ববোধ বা পারস্পরিক সহযোগিতা পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তাই ডেলর কমিশনের শিক্ষার একটি অন্যতম লক্ষ্য হল একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা।
উপসংহার (Conclusion)
পরিশেষে বলা যায়, ডেলর কমিশনের আলোকে আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য (Delors Commission on Education) বা ডেলর কমিশনের চারটি স্তম্ভ আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। কারণ এই লক্ষ্য গুলি অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন একদিকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে তেমনি তাদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধন সম্ভব করা হয়। তাই আধুনিক শিক্ষা ক্ষেত্রে শিক্ষার চারটি স্তম্ভ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।
তথ্যসূত্র (References)
- Aggarwal, J. C., Theory and Principles of Education. 13th Ed. Vikas Publishing House Pvt. Ltd.
- V.R. Taneja, Educational Thoughts & Practice. Sterling Publication Pvt. Ltd. New Delhi
- Nayak, B.K, Text Book of Foundation of Education. Cuttack, Odisha: KitabMhal
- Ravi, S. Samuel, A Comprehensive Study of Education, Fourth Printing-May 2016, Delhi – 110092, ISBN – 978-81-203-4182-1,
- Internet sources
প্রশ্ন – শিক্ষার চারটি স্তম্ভ এর প্রবক্তা কে
উত্তর – শিক্ষার চারটি স্তম্ভ এর প্রবক্তা হলেন – ফ্রান্সের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জ্যাক ডেলর।
প্রশ্ন – ডেলর কমিশনের প্রতিবেদনটি হল
উত্তর – ডেলর কমিশনের প্রতিবেদনটি হল ‘Learning: The Treasure Within” অর্থাৎ শিখন: অন্তর্নিহিত সম্পদ।
প্রশ্ন – ডেলরস কমিশনের শিরোনাম কি ছিল
উত্তর – ডেলরস কমিশনের শিরোনাম ছিল ‘Learning: The Treasure Within” অর্থাৎ শিখন: অন্তর্নিহিত সম্পদ।
প্রশ্ন – ডেলর কমিশন কত সালে রিপোর্ট পেশ করে ?
উত্তর – ডেলর কমিশন ১৯৯৬ সালে রিপোর্ট পেশ করে।
প্রশ্ন – UNESCO -এর পুরো নাম কি
উত্তর – UNESCO -এর পুরো নাম হল – United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization.
প্রশ্ন – শিক্ষার উদ্দেশ্য চারটি স্তম্ভ কি কি?
উত্তর – শিক্ষার উদ্দেশ্য চারটি স্তম্ভ হল –
i) জানার জন্য শিক্ষা,
ii) কর্মের জন্য শিক্ষা
iii) প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা এবং
iv) একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা।
প্রশ্ন – ডেলর কমিশনের কয়টি স্তম্ভ ও কি কি?
উত্তর – ডেলর কমিশনের চারটি স্তম্ভ। সেগুলি হল –
i) জানার জন্য শিক্ষা,
ii) কর্মের জন্য শিক্ষা
iii) প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা এবং
iv) একত্রে বসবাসের জন্য শিক্ষা।
আরোও পড়ুন
- প্রাচীন প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য | 6 Characteristics of the Paleolithic Era
- মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য | 6 Characteristics of Mesolithic Age
- নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য | 6 Characteristics of Neolithic Age
- হরপ্পা সভ্যতা পতনের কারণ | Decline of Harappan Civilization
- হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা বর্ণনা দাও | Town Planning of Harappan Civilization
- HS History Suggestion 2025 | উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2025