ভারতের ইতিহাসে সম্রাট শশাঙ্ক ছেলেরা অন্যতম ব্যক্তিত্ব। কেবলমাত্র সাম্রাজ্য বিস্তার নয়, শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা (Achievement of Sasanka in Bengal) করলে বহু দিক পরিস্ফুটিত হয়।
শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা | Achievement of Sasanka in Bengal
শশাঙ্ক আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারতের সাম্রাজ্য বিস্তারের কল্পনা এবং সার্বভৌম বাংলা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিল তার বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শশাঙ্ক (600 থেকে 636 AD) ছিলেন বাংলাদেশের তথা গৌড়ের প্রথম সার্বভৌম নরপতি। শশাঙ্কের প্রথম জীবনের তথ্য সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না গেলেও শশাঙ্ক বিহারের সাহাবাদ জেলার অন্তর্গত রোটসগর গিরি দুর্গ থেকে প্রাপ্ত একটি শিলালেখতে শ্রী মহাসামন্ত শশাঙ্ক দেব শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায়।
সম্রাট শশাঙ্কের কৃতিত্ব আলোচনা করলে বহু দিক উন্মোচিত হয়। সম্রাট শশাঙ্কের বিভিন্ন কৃতিত্ব গুলি এখানে আলোচনা করা হল –
1. সাম্রাজ্য বিস্তার
অসংখ্য ছিলেন বাংলার সর্ব প্রথম শক্তিশালী স্বাধীন রাজা। শশাঙ্ক গুরুত্ব রাজাদের অধিকৃত রাজ্যগুলির মধ্য থেকে তিনি গৌড় রাজ্যকে স্বাধীন করে এক সার্বভৌম বাঙালি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। সমগ্র বঙ্গ বঙ্গ দেশে তিনি আধিপত্য বিস্তার করেন।
পরবর্তীতে শশাঙ্ক দন্ডভুক্তি (মেদিনীপুর), উৎকল ও কঙ্গোদ (উত্তর ও দক্ষিণ উড়িষা), মগধ, বারানসি প্রভৃতি অঞ্চল নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্তি করেন। অর্থাৎ শশাঙ্ক কেবলমাত্র গৌড়কে স্বাধীন রাজ্যে রূপান্তরিত করেছিল তা নয়। বরং তিনি উত্তর ভারতের সাম্রাজ্য স্থাপনে ও সচেষ্ট হয়েছিলেন।
তাছাড়া শশাঙ্ক মালবরাজ দেবগুপ্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে কনৌজ ও থানেশ্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ছিলেন।
2. হর্ষবর্ধনকে প্রতিরোধ
শশাঙ্কর রাজত্বকালে সম্রাট হর্ষবর্ধন বাংলার কোনো অনিষ্ঠ সাধন করতে পারেননি। কারণ কূটনীতির দিক থেকে শশাঙ্ক ছিলেন অদ্বিতীয়। শশাঙ্কের বিরুদ্ধে হর্ষবর্ধন যে বিশেষ সাফল্য লাভ করতে সমর্থ হননি, তা শশাঙ্কের তিনটি শিলালিপি থেকে প্রমাণ হয়।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক মজুমদার বলেছেন – শশাঙ্ক তার মৃত্যুকাল অবধি গৌড়, দন্ডভুক্তি, মগধ, উৎকল ও কঙ্গোদের অধিপতি ছিলেন।
মালবরাজ দেবগুপ্তের সঙ্গে শশাঙ্কের বন্ধুত্ব তাঁর কূটনীতির দিকের বিশেষ পরিচয় দেয়। তাছাড়া রাজ্যবর্ধনের সঙ্গে শশাঙ্কের যুদ্ধের ফলে রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু হয় এতে শশাঙ্কের সামরিক দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।
3. মুদ্রার প্রচলন
চীনা পর্যটক হিউয়েন-সাঙের বিবরণী থেকে শশাঙ্কের রাজত্বকালে মুদ্রার প্রচলন এর কথা জানা যায়। অর্থাৎ সম্রাট শশাঙ্কের রাজত্বকালে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে শশাঙ্কের পর গৌড় রাজ্যে আর স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন শুরু হয়নি।
4. প্রশাসনিক দক্ষতা
গৌড়রাজ শশাঙ্কের রাজত্বকালে প্রশাসন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্য খুব বেশি পাওয়া যায় না। তবে চীনা পর্যটক হিউয়েন-সাঙের বিবরণে শশাঙ্কের সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার যে ধারণা পাওয়া যায় তা থেকে প্রশাসনিক দক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
5. প্রাকৃতিক সীমান্ত স্থাপন
শশাঙ্কের রাজ্য বিস্তার নীতির প্রথম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল এক প্রাকৃতিক সীমা লাভের চেষ্টা। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সীমা হলো পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদ, পশ্চিমে শোনগণ্ডক উপত্যকা, উত্তরের হিমালয় এবং দক্ষিণের চিলকা হদ। এইরকম প্রাকৃতিক সীমানা থাকলে রাজ্যগুলির আক্রমণে বাংলার স্বাধীনতা নষ্ট হতো।
সমকালীন তাম্রফলক থেকে জানা যায়, গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক কামরূপের ভাস্কর বর্মাকে পরাজিত করেন। তাছাড়া ওড়িশার রাজবংশ শশাঙ্কের বশ্যতা স্বীকার করেন।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, শশাঙ্কের কৃতিত্ব (Achievement of Sasanka) বা রাজ্য বিস্তার সম্পর্কে খুব বেশি গ্রহণযোগ্য বা প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার সর্বপ্রথম শক্তিশালী রাজা। তিনি গৌড় রাজ্যের পাশাপাশি সমগ্র দক্ষিণ বিহার ও উড়িষ্যার উপর নিজের আধিপত্য বিস্তারে সমর্থ হয়েছিলেন। শশাঙ্কের সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি অনুসরণ করে পরবর্তীকালে পাল রাজারা তাঁদের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন – বানভট্ট বা হিউয়েন-সাঙ যদি শশাঙ্ক বিরোধী না হয়ে নিরপেক্ষ বিচারক হতেন তাহলে শশাঙ্ক হয়তো হর্ষবর্ধনের সমকক্ষ হিসেবে ইতিহাসের স্থান পেতেন।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Achievement of Sasanka in Bengal
- Online Sources
প্রশ্ন – শশাঙ্ক কোথাকার রাজা ছিলেন
উত্তর – শশাঙ্ক ছিলেন গৌড়ের রাজা।
প্রশ্ন – শশাঙ্ক কোন বংশের রাজা ছিলেন
উত্তর – শশাঙ্ক ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধীনে এক সামন্ত রাজা। শশাঙ্ক গৌড় রাজ্যের অধিপতি ছিলেন।
প্রশ্ন – কর্ণসুবর্ণ কোন রাজার রাজধানী ছিল
উত্তর – গৌড় সম্রাট শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।
প্রশ্ন – কর্ণসুবর্ণ বর্তমান নাম কি
উত্তর – কর্ণসুবর্ণ একটি প্রাচীন শহর। এটি বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর ব্লকে অবস্থিত।
প্রশ্ন – গৌড়ের রাজা কে ছিলেন
উত্তর – গৌড়ের রাজা ছিলেন সম্রাট শশাঙ্ক।
প্রশ্ন – বাংলার প্রথম রাজা কে ছিলেন
উত্তর – বাংলার প্রথম রাজা ছিলেন গৌড় রাজ্যের অধিপতি শশাঙ্ক।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum