মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তারের ক্ষেত্রে সম্রাট অশোকের ভূমিকা ছিল অন্যতম। কেবল মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তার নয় সম্রাট অশোকের কৃতিত্ব (Achievements of Emperor Ashoka) মৌর্য সাম্রাজ্যের ইতিহাসে বিভিন্ন দিক থেকে বিদ্যমান।
মৌর্য সম্রাট বিন্দুসারের মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য পুত্র অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩ সালে মগধের সিংহাসনে বসেন। সম্রাট অশোকের মতো প্রতিভা সম্পন্ন রাজা ইতিহাসে নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল। অর্থাৎ সম্রাট অশোকের কৃতিত্ব ছিল বহুমুখী এবং জনকল্যাণগামী।
সম্রাট অশোকের কৃতিত্ব | Achievements of Emperor Ashoka
সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩ সালে মগধের সিংহাসনে বসার পর পূর্বপুরুষদের চিরাচরিত রাজ্য বিস্তার নীতি অনুসরণ করেন। সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৭৩ থেকে ২৩২ অব্দ পর্যন্ত মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন।
সম্রাট অশোকের কৃতিত্ব যে সমস্ত দিক থেকে, পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. রাজ্য জয়
সিংহাসনে আরোহন করার পর সম্রাট অশোক পূর্বপুরুষদের মতো রাজ্য জয়ের নেশায় বিভিন্ন যুদ্ধে লিপ্ত হন। তার মধ্যে অন্যতম হলো কলিঙ্গ যুদ্ধ। প্রবল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে সম্রাট অশোক কলিঙ্গ জয় করেন।
কিন্তু কলিঙ্গের যুদ্ধের ফলে যে হত্যা লীলা ও মানুষে মানুষে হিংসা সম্রাট অশোককে প্রবলভাবে আঘাত এবং ব্যথিত করে। ফলে অশোক পরবর্তীকালে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন এবং রাজ্য জয়ের পরিবর্তে ধর্ম বিজয় নীতি গ্রহণ করেন। এইভাবে অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের পর একটি ঐক্যবদ্ধ শান্তিবাদী অহিংসার রাষ্ট্র গঠনে উদ্যোগী হন।
2. ধর্মনীতি
কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোক অলিন্দের যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে নিজে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। কিন্তু তিনি তার ধর্মমত রোজাদের উপর চাপিয়ে দেননি। তিনি শিলালিপিতে ধম্ম কথাটি ব্যবহার করেছিলেন।
ডঃ রমিলা থাপার ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন – ধর্মকে দেখেছিলেন। এই কারণে অশোকের অনুষ্ঠিত ধর্মকে কোন বিশেষ ধর্ম না বলে নৈতিক কর্তব্য পালনের নীতি বলে অভিহিত করা হয়।
3. শাসনব্যবস্থা
অশোকের শাসন ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক বা ধর্ম বিজয়নীতির প্রভাব থাকলেও তা পিতৃত্ববোধের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সাংস্কৃতিক সংহতি স্থাপন ছিল অশোকের শাসনব্যবস্থা অন্যতম লক্ষ্য।
এছাড়া সম্রাট অশোক কল্যাণমুখী প্রশাসন পরিচালনার জন্য রাজুক, প্রাদেশিক, ধর্ম মহামাত্র প্রমূখ নতুন শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ করেন। সম্রাট অশোকের মতে সব মানুষই আমার সন্তান তুল্য। অর্থাৎ অশোক ছিলেন প্রথম সম্রাট যিনি প্রজা কল্যাণকর রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
4. বিশ্বজনীন ধর্ম
সম্রাট অশোক মূলত বিশ্বজনীন ধর্ম প্রচার করেছিলেন। তিনি পরিশুদ্ধ সামাজিক জীবন গড়ে তোলার জন্য দয়া, মায়া, দান প্রভৃতি বারোটি গুণের অনুশীলন করা নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই অশোকের ধর্মনীতি ছিল অনেক বেশি উদার ও মানবতাবাদী।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ডক্টর রাধাকুমুদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন – ‘অশোক তাঁর ধর্মে ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনকে পরিশুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন”।
5. জনহিতকর কার্যাবলী
অশোক জনহিতকর বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেছিলেন। অর্থাৎ সম্রাট অশোক বিভিন্ন সংস্কারের মাধ্যমে মৌর্য শাসন ব্যবস্থাকে জনকল্যাণকামী করে তোলে।
তিনি বহু রাজপথ, অতিথিশালা, মানুষ ও পশু চিকিৎসালয় স্থাপন, বৃক্ষরোপণ, জলাশয় ও কুপ খনন প্রভৃতি জনহিতকর কার্যাবলীর মাধ্যমে মৌর্য সাম্রাজ্যকে সংস্কার সাধন করেছিলেন। তাছাড়া অশোক তার রাজ্যে পশু বলি বা পশু হত্যা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
অশোক বলেন – ‘ সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ সাধন করার থেকে মহৎ কিছু নেই’।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, অশোক ছিলেন বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম জ্ঞানদীপ্ত সম্রাট। যিনি জনগণের উন্নতিকল্পে তার জীবনকে উৎসর্গ করেন। তাই বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ সম্রাট অশোককে সর্বকালের এবং সর্বশেষের শ্রেষ্ঠ সম্রাটদের মধ্যে অন্যতম বলে স্বীকার করেছেন।
ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ রাজা হলেও বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণের জন্য সম্রাট অশোককে দায়ী করেছেন। বিশিষ্ট ঐতিহাসিক পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সম্রাট অশোককে ব্রাহ্মণ বিদ্বেষী ও মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী করেছেন। আবার ঐতিহাসিক ভান্ডারকর বলেছেন – সম্রাট অশোকের অতি আধ্যাত্মিক নীতি মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ডেকে আনে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Achievements of Emperor Ashoka
- Online Sources
প্রশ্ন – সম্রাট অশোকের পিতার নাম কি
উত্তর – সম্রাট অশোকের পিতার নাম ছিল বিন্দুসার। পিতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মৃত্যুর পর বিন্দুসার অমিত্রাঘাত উপাধি গ্রহণ করে ৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মগধের সিংহাসনে বসেন এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের বিস্তার সাধন করেন।
প্রশ্ন – সম্রাট অশোকের রাজধানী কোথায় ছিল
উত্তর – সম্রাট অশোকের রাজধানী ছিল পাটলিপুত্র। যেটি বর্তমানে পাটনার অন্তর্গত।
প্রশ্ন – অশোক কে কেন শ্রেষ্ঠ সম্রাট বলা হয়
সম্রাট অশোক ছিলেন দেশের তথা পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সম্রাট। তাঁর রাজ্য বিস্তার নীতি ও জনহিতকর কার্যাবলী তাকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছিল। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতার ফলে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন এবং রাজ্য জয়ের পরিবর্তে ধর্ম বিজয় নীতি গ্রহণ করেন। তাই বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ বিশ্ব ইতিহাসে অশোককে শ্রেষ্ঠ সম্রাট বা নৃপতি বলে অভিহিত করেন।
প্রশ্ন – সম্রাট অশোকের উপাধি কি ছিল
উত্তর – সম্রাট অশোকের উপাধি ছিল ‘দেবানাম প্রিয়দর্শী’ বা ‘প্রিয়দর্শী রাজা’। এর উপাধির অর্থ “দেবতাদের প্রিয় এবং সুন্দর দর্শন বিশিষ্ট রাজা।”
Q. Ashoka date of birth and death
Ans. – Emperor Ashoka is believed to have been born around 304 BC and died around 232 BC.
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
সম্রাট অশোকের কৃতিত্ব | Achievements of Emperor Ashoka সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।