উনবিংশ শতকের সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করার জন্য ডিরোজিও নেতৃত্বে নব্যবঙ্গ আন্দোলন (Young Bengal Movement) সূচনা হয়।
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত একদল যুবক ডিরোজিওর সঙ্গে তৎকালীন সমাজের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের প্রতি সোচ্চার হয়েছিলেন। সমাজকে অন্ধ বিশ্বাসও কুসংস্কারের থেকে মুক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। ঐতিহাসিকগণ এই আন্দোলনকে নব্যবঙ্গ আন্দোলন হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন।
নব্যবঙ্গ আন্দোলন | Young Bengal Movement
উনবিংশ শতকের শুরুতে হিন্দু কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের তরুন অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর নেতৃত্বে একদল যুবক হিন্দুধর্ম ও তৎকালীন সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। ডিরোজিওর নেতৃত্বে এই চরমপন্থী বিদ্রোহ বা আন্দোলন ইতিহাসে নব্যবঙ্গ আন্দোলন নামে পরিচিত।
এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুধর্ম ও তৎকালীন সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করা। অর্থাৎ ঊনবিংশ শতকের বাংলার এই সংস্কার আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য দিক হল – শিক্ষা, সমাজ ও ধর্ম সংস্কার।
ডিরোজিও অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর ছাত্রদের মধ্যে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের প্রসার ঘটিয়েছিলেন। ডিরোজিও এবং তার অনুগামীদের লেখা বই, প্রবন্ধ, কবিতা, শিবনাথ শাস্ত্রীর লেখা ‘ রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ সমাজ’ প্রভৃতি থেকে নব্যবঙ্গ আন্দোলন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
ডিরোজিওর অনুগামীরা সমাজের বিভিন্ন রীতিনীতি বিশেষত হিন্দু সমাজের, আচার অনুষ্ঠান, নারীদের উপরও বিভিন্ন নিষেধ, অস্পৃশ্যতা, বর্ণভেদ প্রভৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তারা প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ খাদ্য (গরুর মাংস) এবং পানীয় হিন্দুদের দেখিয়ে দেখিয়ে গ্রহণ করে হিন্দু সমাজকে প্রবল ধাক্কা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন হিন্দু সমাজে এগুলি প্রাথমিকভাবে তরঙ্গ সৃষ্টি করলেও তা বেশিদিন তাই হয়নি।
কারণ এগুলির অধিকাংশ তৎকালীন হিন্দু সমাজ ভালো চোখে দেখেনি। তাছাড়া ডিরোজিওর অনুগামীদের অতিরিক্ত নেতিবাচক মনোভাব এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এই আন্দোলনকে ব্যর্থ করেছিল।
ডিরোজিওর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নব্যবঙ্গ আন্দোলনকে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের কর্তা ব্যক্তিরা মেনে নিতে পারেনি। এদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্য ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ডিরোজিও অনুগামীদের বলা হয় ডিরোজিয়ান। এদের বেশিরভাগই ছিল হিন্দু কলেজের ছাত্র। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ ছিলেন-প্যারীচাঁদ মিত্র, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, রাধানাথ সিকদার, লালবিহারি দে প্রমুখ।
নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল কেন
সামাজিক অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গঠিত নব্যবঙ্গ আন্দোলন বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হয়েছিল। নব্য বঙ্গ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ গুলি হল –
i) ডিরোজিওর অনুগামীদের অতিরিক্ত ঔদ্ধত্য-এর ফলে তৎকালীন হিন্দুসমাজ এই আন্দোলনকে সমর্থন করেননি।
ii) পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এই আন্দোলনে কেউ (সাধারন জনগণ) যোগদান করেননি।
ii) তৎকালীন রাজা রামমোহন রায়ের অনুগামীদের সঙ্গে ডিরোজিওর অনুগামীদের মতান্তরের ফলে এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। পরবর্তীকালে ডিরোজিওর মৃত্যুর পর ডিরোজিওর অনেক অনুগামী রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিয়েছিল।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, ডিরোজিও নেতৃত্বে নব্যবঙ্গের সদস্যরা হিন্দুদের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। যেমন – হিন্দুরা গঙ্গাজলকে পবিত্র মনে করেন। কিন্তু নব্যবঙ্গের সদস্যরা এটিকে কুসংস্কার বলে মনে করত। প্রথমদিকে এই আন্দোলন তীব্রতর হলেও পরবর্তীকালে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ এটিকে গুরুত্ব দেয়নি। তাছাড়া ডিরোজিওর মৃত্যুর পর এই আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং এই আন্দোলনের বহু সদস্য আন্দোলনের মূল স্রোত থেকে সরে গিয়েছিল।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী ছিল
উত্তর – নব্যবঙ্গ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দুধর্ম ও তৎকালীন সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করা। তাছাড়া ডিরোজিওর অনুগামীরা পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল। তাই এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা ভারতে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ও ইংরেজি ভাষার স্বীকৃতি চেয়েছিল।
প্রশ্ন – নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছিল কেন
উত্তর – ডিরোজিওর অনুগামীদের অতিরিক্ত ঔদ্ধত্য-এর ফলে তৎকালীন হিন্দুসমাজ এই আন্দোলনকে সমর্থন করেননি।
তাছাড়া পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া এই আন্দোলনে কেউ যোগদান করেননি এবং তৎকালীন রাজা রামমোহন রায়ের অনুগামীদের সঙ্গে ডিরোজিওর অনুগামীদের মতান্তরের ফলে এই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। এবং পরবর্তীকালে ডিরোজিওর মৃত্যুর পর ডিরোজিওর অনেক অনুগামী রাজা রামমোহন রায়ের ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিয়েছিল।
প্রশ্ন – নব্যবঙ্গ আন্দোলন কে শুরু করেছিলেন?
উত্তর – হিন্দু কলেজের তরুণ অধ্যাপক অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও নব্য় বঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
প্রশ্ন – নববঙ্গ আন্দোলনের মুখপাত্র কে ছিলেন?
উত্তর – নববঙ্গ আন্দোলনের মুখপাত্র ছিলেন হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও ।
প্রশ্ন – কারা ইয়ং বেঙ্গল নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর – ইয়ং বেঙ্গলের সদস্যদের মধ্যে অন্যতম হলেন – কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, মাধবচন্দ্র মল্লিক, রামতনু লাহিড়ী, মহেশচন্দ্র ঘোষ, শিবচন্দ্র দেব।
প্রশ্ন – ডিরোজিওর পুরো নাম কি ছিল?
উত্তর – ডিরোজিওর পুরো নাম ছিল – হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।
প্রশ্ন – নব্য বঙ্গ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন কে?
উত্তর – নব্য বঙ্গ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও।
Q. Who started Young Bengal Movement
Ans. Henry Louis Vivian Derozio (1809-1831) started Young Bengal Movement.
Q. Young Bengal Movement was started by
Ans. – Young Bengal Movement was started by Henry Louis Vivian Derozio (1809-1831).
Q. Young Bengal Movement founder
Ans – Young Bengal Movement founder was Henry Louis Vivian Derozio (1809-1831).
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum