ইংরেজ সরকারের দমন পিড়ন নীতি এবং জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ও বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন (Non Cooperation Movement) শুরু হয়।
দীর্ঘদিন ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ও দমন নীতির বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবে যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এটি অসহযোগ আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন।
অসহযোগ আন্দোলন কি | Non Cooperation Movement
১৯২০ সালে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতার অধিবেশনে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব পেশ করেন এবং তা গৃহীত হয়। এই অসহযোগ আন্দোলন পরবর্তীকালে নাগপুর কংগ্রেসের অধিবেশনেও সমর্থিত হয়।
ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার ও দমন নীতির প্রতিবাদ স্বরূপ এবং জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ও বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।
গান্ধীজী বলেন যে – ব্রিটিশ সরকার যদি ভারতীয়দের প্রতি ন্যায়বিচার না করে, তাহলে প্রতিটি ভারতবাসীর কর্তব্য হবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে বর্জন করা ও ধ্বংস করা। এর ফলে গান্ধীজীর নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ভিত্তিতে অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য
গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের বিভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল। এগুলি হল –
i) ব্রিটিশদের দমনমূলক আইনগুলির বিরোধিতা করা। বিশেষ করে ভারতীয়দের পক্ষে ক্ষতিকারক রাওলাট আইনকে বিরোধিতা করা ও বর্জন করা।
ii) ব্রিটিশদের অমানবিক জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।
iii) খিলাফত সমস্যার সমাধানের দাবি জানানো।
iv) এক বছরের মধ্যে স্বরাজ বা স্বাধীনতা অর্জন করা প্রভৃতি।
অসহযোগ আন্দোলনের বিস্তার
গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের বিস্তার সারা ভারত বর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। অর্থাৎ গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের সাড়া দিয়ে সারা ভারতবাসী এই আন্দোলনে যোগদান করেছিল।
গান্ধীজি ছাড়াও এই আন্দোলনে যারা প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মতিলাল নেহেরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, রাজেন্দ্র প্রসাদ, চক্রবর্তী রাজাগোপালচারী প্রমূখ। তাছাড়া নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (IAS) পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এই আন্দোলনে হিন্দু নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি মুসলিমরাও যোগদান করেছিলেন। অর্থাৎ এই আন্দোলনে সমস্ত মানুষ জাতিভেদ প্রথা ভুলে সকলে একত্রে সামিল হয়েছিলেন। এই আন্দোলনের মুসলিম নেতৃবৃন্দের মধ্যে মোহাম্মদ আলী, সৈকত আলী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমূখ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এই আন্দোলনের ফলে ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা যেমন কলকাতা, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, বিহার, উড়িষ্যা, গুজরাট প্রভৃতি জায়গা থেকে হাজার হাজার কৃষক, শ্রমিক ও দলে দলে ছাত্ররা যোগদান করেছিলেন।
এই আন্দোলনের ফলে একপ্রকার বিভিন্ন সরকারি অফিস, আদালত, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি এই আন্দোলনের ফলে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছিল।
অসহযোগ আন্দোলন কেন প্রত্যাহার করা হয়
অসহযোগ আন্দোলন যখন গণআন্দোলনে রূপান্তরের দিকে এগিয়ে চলেছিল তখন উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা ঘটনার পর ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। কারণ এই ঘটনায় ক্ষুদ্ধ জনতা চৌরিচৌরা থানা আক্রমণ করেন এবং এই ঘটনায় ২২ জন পুলিশ নিহত হন।
তবে এই আন্দোলন প্রত্যাহারে অনেক নেতা ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এই আন্দোলন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে বলেছিলেন – অসহযোগ আন্দোলনের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ছিল “এক জাতীয় বিপর্যয়ের সমান”।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন (Non Cooperation Movement) স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই আন্দোলনের ফলে জাতীয় কংগ্রেসের সংগঠনের প্রভাব ও শক্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এই আন্দোলন জাতপাতের সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর মানুষকে একসঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত করেছিল। তাই এই আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল বলে অনেক ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন কে কে?
উত্তর – অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন স্বয়ং গান্ধীজি। এছাড়া এই আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন মতিলাল নেহেরু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, রাজেন্দ্র প্রসাদ, রাজা গোপালচারী প্রমূখ।
প্রশ্ন – অসহযোগ আন্দোলন কবে প্রত্যাহার করা হয়
উত্তর – উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা ঘটনার পর ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। তবে এই আন্দোলন প্রত্যাহারে অনেক নেতা ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন।
প্রশ্ন – অসহযোগ আন্দোলন কবে কোথায় শুরু হয়
উত্তর – অসহযোগ আন্দোলন গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের কলকাতার অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই আন্দোলন কলকাতা থেকে সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন – অসহযোগ আন্দোলন কেন হয়েছিল
উত্তর – ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার এবং জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ও বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।
Q. Why Gandhiji decided to withdraw the non cooperation movement
Ans. – On 11 February 1922, Gandhiji called off the Non-Cooperation Movement after the Chauri Chaura incident in Gorakhpur district of Uttar Pradesh.
Q. When was non cooperation movement started
Ans. – Non cooperation movement started on 1920 by the Indian National Congress (INC) under the leadership of Mahatma Gandhi.
Q. Non cooperation movement started in
Ans. – Non cooperation movement started in 1920.
Q. Non Cooperation Movement ended in which year
Ans. – Non Cooperation Movement ended in 1922 after the Chauri Chaura incident.
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum