ওয়াভেল পরিকল্পনা কি | সিমলা বৈঠক কি | Wavell Plan and Simla Conference 1945

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে দেন। এর জন্য ব্রিটিশ সরকারবিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হল ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan)।

ওয়াভেল পরিকল্পনার পটভূমি

১৯৪৩-৪৪ সালে বাংলার ভয়ংকর দুর্ভিক্ষএবং সাম্প্রদায়িক সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। লর্ড ওয়াভেল ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধিকে কারামুক্ত করেন এবং ভারতের মৌলিক ঐক্যের উপর ভিত্তি করে ভারতের শাসনতন্ত্র রচনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন। কিন্তু জিন্নাহ্‌ তাঁর ‘পাকিস্তান’ দাবিতে অটল থাকেন। ফলে কংগ্রেস গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তখন জিন্নাহ্‌ ঘোষণা করেন ‘ভাগ কর, ভারত ছাড়ো’। এর ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিগুলির মোকাবিলা করার জন্য ওয়াভেল পরিকল্পনা গৃহীত হয়।

ওয়াভেল পরিকল্পনা | Wavell Plan

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অশান্ত হয়ে ওঠে। তাছাড়া ভারতীয়দের স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনের অবসানকে নিশ্চিত করে তোলে।

ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা, আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযান, অসহযোগ আন্দোলন, ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রভৃতি ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে।

এইরকম পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রে ক্ষমতা লাভকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। ফলে সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু হয়।

ব্রিটিশ সরকার এই সমস্ত আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করতে উদ্যত হলে , পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। এইরকম পরিস্থিতিতে ১৯৪৫ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হওয়ার পর ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম হল ওয়াভেল পরিকল্পনা (Wavell Plan)

ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় রাজনৈতিক জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য বড়লাট লর্ড আর্কিবল্ড ওয়াভেলকে নিযুক্ত করেন। ১৯৪৫ সালে ওয়াভেল এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এটি ওয়াভেল পরিকল্পনা নামে খ্যাত।

ওয়াভেল পরিকল্পনার প্রস্তাব

ওয়াভেল পরিকল্পনার মূল প্রস্তাব বা ধারাগুলি হল নিম্নলিখিত –

i) ভারতের নতুন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।

ii) বড়লাটের কার্যনির্বাহক পরিষদে বর্ণ হিন্দু ও মুসলমান সদস্যদের সংখ্যা সমান থাকবে।

iii) একমাত্র বড়লাট ও প্রধান সেনাপতি ছাড়া পরিষদের আর সব সদস্যই ভারতীয় হবে।

iv) যতদিন ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব থাকবে ব্রিটিশ সরকারের হাতে থাকবে, ততদিন সামরিক দপ্তরের যাবতীয় দায়িত্বভার ব্রিটিশদের হাতে ন্যস্ত থাকবে।

v) প্রদেশ গুলিতে দায়িত্বশীল সরকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।

সিমলা বৈঠক (জুন 1945) | Simla Conference

ওয়াভেল পরিকল্পনার প্রস্তাব নিয়ে আলাদা আলোচনা জন্য ১৯৪৫ সালের জুন মাসে সিমলায় একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান করা হয়। এটি সিমলা বৈঠক নামে পরিচিত।

এই সিমলা বৈঠকে জিন্নাহ্‌ দুটি শর্ত আরোপ করেন, যথা –

i) বড়লাটের পরিষদের সব মুসলিম সদস্য মুসলিম লীগ থেকে নিতে হবে এবং

ii) পাকিস্তান প্রস্তাব কার্যকর করা ও মুসলমান সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার জন্য বড়লাট প্রয়োজনে ‘ভেটো’ দিতে পারবেন।

সিমলা বৈঠকের ব্যর্থতা

জিন্নাহ্‌র এই প্রস্তাব কংগ্রেস, শিখ এবং হরিজন সম্প্রদায় সমর্থন না করা সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হয়ে যায়। এছাড়া কার্যনির্বাহক সভায় কংগ্রেস কর্তৃক মুসলমান প্রতিনিধিত্ব করবার দাবিতে অসম্মত হন। শিখ ও তপশিলি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা সিমলা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

প্রকৃতপক্ষে এই বৈঠকে হিন্দু-মুসলিম প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিলে ওয়াভেল সিমলা বৈঠকের ব্যর্থতা ঘোষণা করেন।

ইংরেজ সরকার ব্যর্থতার জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লিগকে দায়ী করে। যদিও সিমলা বৈঠকের ব্যর্থতার জন্য জিন্নাহ্-র অনমনীয় মনোভাবকে দায়ি করা হয়। কিন্তু ব্রিটিশ মন্ত্রীসভারও কম দায়িত্ব ছিল না।

জিন্নাহর মনোভাবে ওয়াভেল অসন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ ওয়াভেল ভারত বিভাগ চাননি। সিমলা বৈঠকেই প্রমাণিত হয়ে যায় যে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের দাবির মধ্যে সামঞ্জস্য ছিল না এবং ভারত বিভাগ প্রায় অনিবার্য।

জিন্নাহ্ পাকিস্তান দাবিতে অনড় থাকায় এবং সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হলে মুসমলানদের কাছে তাঁর উজ্জ্বল এক ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে। তাই সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হলেও এ তাৎপর্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বৈঠকে একসঙ্গে সমস্ত রাজনৈতিক দলের মিলিত হওয়া সম্ভব হয়েছিল।

উপসংহার

সর্বোপরি বলা যায়, ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা অর্পনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের হাতে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব রেখে দেয়। ফলে ভারতীয়দের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তাছাড়া কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে ভারত বিভাজন সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ দেখা দেয়। ফলে এই ওয়াভেল পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্য সিমলা বৈঠক হলেও জিন্নাহ্‌র শর্তকে কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল মেনে নেয়নি। তাই এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Online Sources

প্রশ্ন – ওয়াভেল পরিকল্পনা কে এবং কখন পেশ করেন

উত্তর – ওয়াভেল পরিকল্পনা বড়লাট লর্ড আর্কিবল্ড ওয়াভেল ১৯৪৫ সালে ভারতীয় রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য পেশ করেন।

প্রশ্ন – ওয়াভেল পরিকল্পনা কত সালে হয়

উত্তর – ওয়াভেল পরিকল্পনা ১৯৪৫ সালে পেশ হয়।

Q. Wavell Plan date

Ans. – Wavell Plan date on June 14, 1945.

Q. Wavell plan was introduced by

Ans – Wavell plan was introduced by Lord Archibald Wavell.

প্রশ্ন – সিমলা বৈঠক কবে অনুষ্ঠিত হয়

উত্তর – সিমলা বৈঠক 1945 সালের মাসে ওয়াভেল পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য সিমলায় একটি সর্বদলীয় বৈঠকের আহবান করা হয়।

আরোও পোস্ট পড়ুন

Leave a Comment