পরাধীন ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান (Role of Subhash Chandra Bose in Freedom Struggle) ছিল অগ্রগণ্য।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধীজীর পাশাপাশি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান অনস্বীকার্য। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম প্রধানত দুটি দিক থেকে সংঘটিত হয়েছিল। একটি গান্ধীজীর নেতৃত্বে এবং অপরটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গঠিত সশস্ত্র আন্দোলন। একদিকে গান্ধীজি ভারতের স্বাধীনতার জন্য নিরস্ত্রভাবে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন অপরদিকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সশস্ত্র অভিযানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান | Role of Subhash Chandra Bose in Freedom Struggle
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীজীর পরিকল্পিত স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিরোধিতা করার জন্য কংগ্রেস থেকে বহিস্কৃত হন।
পরবর্তীকালে তিনি ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আপসহীন সংগ্রাম শুরু করেন। কিন্তু প্রথমে তিনি ব্রিটিশদের দ্বারা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। কারাগারে থাকাকালীন সুভাষচন্দ্র বসু উপলব্ধি করেন ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য আন্দোলন করা একপ্রকার অসম্ভব।
তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার উদ্দেশ্যে ‘ শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’ এই নীতি অনুসরণ করে বাইরে থেকে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেন।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান গুলি এখানে আলোকপাত করা হলো।
1. আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ইংরেজদের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু কাবুলের পথে পাড়ি দেন ও কাবুল থেকে রাশিয়া হয়ে জার্মানির বার্লিনে পৌঁছান।
জার্মানিতে পৌঁছে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী প্রচার শুরু করেন। কিন্তু জার্মানি থেকে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব নয় বুঝতে পেরে সুভাষচন্দ্র জাপানের সমর্থনে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।
পরবর্তীকালে বিপ্লবী মহানায়ক রাজবিহারী বসুর অনুরোধে সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৩ সালের ১৩ই জুন ডুবোজাহাজে করে জার্মানি থেকে জাপানে এসে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
2. আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা
আজাদ হিন্দ ফৌজের পাশাপাশি নেতাজি আইরীশ অস্থায়ী সরকারের অনুকরণে ১৯৪৩ সালের ২১ শে অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকার স্থাপন করেন।
সুভাষচন্দ্রের গঠিত এই অস্থায়ী সরকারের মূল মন্ত্র ছিল ‘জয় হিন্দ’ ও ‘দিল্লি চলো’।
সুভাষচন্দ্রের গঠিত আজাদ হিন্দ সরকারকে জার্মানি, জাপান এবং ইতালি সহ ৮ টি দেশ স্বীকৃতি জানায়। এই সময়ে নেতাজি জাপানি বেতার থেকে ভারতের স্বাধীনতার বাণী প্রচার করেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ঘোষণা করেন – ‘ দিল্লির পথ হল স্বাধীনতার পথ’। । তাই তিনি ভারতবাসীকে দীপ্ত কন্ঠে আহ্বান জানান “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”
3. নেতাজির সশস্ত্র অভিযান
নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দিল্লি চলো ও জয়হীন মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের সীমান্ত এসে পৌঁছায়।
তাছাড়া নেতাজি জাপানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দায়িত্ব গ্রহণ করে সেখানে ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তীর্ণ করেন। এই দ্বীপগুলির নতুন রামকরন করেন শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপ হিসেবে।
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রহ্মদেশ পার হয়ে মনিপুর রাজ্যে প্রবেশ করে এবং এই বাহিনীর একটি অংশ কোহিমা দখল করে মনিপুরের রাজধানী ইম্ফল দখলের জন্য অগ্রসর হন।
এই সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অর্থাৎ প্রবল বর্ষা শুরু হয় আজাদ হিন্দ বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবার অন্যদিকে ইঙ্গ মার্কিন বাহিনীর আঘাতে জাপান বিধ্বস্ত হয়ে পড়লে নেতাজি কে জাপান সাহায্য করা বন্ধ করে দেয়
ফলে পরবর্তীকালে নেতাজির তৈরি আজাদ হিন্দ বাহিনী বিটিশ সরকারের কাছে আত্মসমর্থন করতে বাধ্য হয়।
১৯৪৫ সালে সুভাষচন্দ্র বসু মাঞ্জুরিয়া যাবার পথে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর এই মৃত্যু খবর অনেকে মেনে নিতে পারেন না। তাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুর রহস্য আজও সারা ভারতবাসীর কাছে সংশয় থেকে গেছে।
উপসংহার
ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতি এবং ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনীর কাছে নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজ সশস্ত্র বাহিনীর পরাজয় হলেও সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়নি এবং এটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজির তৈরি আজাদ হিন্দ বাহিনীর মুক্তি সংগ্রাম স্বর্নাক্ষরে লেখা রয়েছে।
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রামের ফলে ভারতীয় নৌ সেনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অর্থাৎ এর ফলে নৌ বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। তাছাড়া আজাধীন বাহিনীর বিচারকে কেন্দ্র করে 1945 খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে সারা ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী গণআন্দোলনের সূত্রপাত হয়। যা ব্রিটিশ সরকারকে ভীত ও সন্ত্রস্ত করে তোলে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Role of Subhash Chandra Bose in Freedom Struggle
- Online Sources
প্রশ্ন – আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রথম কোথায় গঠিত হয়
উত্তর – আজাদ হিন্দ ফৌজ প্রথম গঠিত হয় সিঙ্গাপুরে। আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন মোহন সিং। ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসু আজাধীন ফৌজ বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং এটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন – আজাদ হিন্দ ফৌজ কে প্রতিষ্ঠা করেন
উত্তর – আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন ভারতের গর্ব ও স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তবে আজাদ হিন্দ ফৌজ বাহিনীর প্রাথমিক গঠন এবং সংগঠনের কাজ করেছিলেন রাজবিহারী বসু।
প্রশ্ন – আজাদ হিন্দ ফৌজ কত সালে গঠিত হয়
উত্তর – আজাদ হিন্দ ফৌজ (Indian National Army বা INA) ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে গঠিত হয়।
প্রশ্ন – নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম তারিখ
উত্তর – নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum