প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা | Role of Nalanda University in Education

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা (Role of Nalanda University in Education) ছিল অত্যন্ত গৌরবময়। এর ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ভারতের বিহার রাজ্যের রাজগীরের সাতমাইল উত্তরে নালন্দা নামে একটি গ্রামে। বর্তমানে এটি বরাগাত্রের কাছে অবস্থিত।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় সাড়ে তিন বর্গমাইল অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চারি পাশে উঁচু পাঁচিল দ্বারা বেষ্টিত ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে ১০০০০ শিক্ষার্থী এবং এক হাজার শিক্ষক থাকার ব্যবস্থা ছিল।

প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা | Role of Nalanda University in Ancient Indian Education

প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বৌদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি কেবল ভারতবর্ষ নয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।

Nalanda University in Ancient Indian

প্রাচীন ভারতের শিক্ষায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল নিম্নলিখিত –

1. অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল অবৈতনিক প্রকৃতির। অর্থাৎ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির আয়ের উৎস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় তার সমস্ত ছাত্রদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্য, পোশাক, চিকিৎসা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করত।

2. শিক্ষার সুযোগ

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার সুযোগ বা প্রবেশাধিকার প্রথম দিকে কঠিন ছিল। অর্থাৎ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশের পরীক্ষা খুবই কঠিন প্রকৃতির ছিল।

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন-সাঙ -এর বিবরণী থেকে পাওয়া যায় মাত্র কুড়ি শতাংশ পরীক্ষার্থী নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সক্ষম হতেন।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির বয়স ছিল কুড়ি বছর। অভ্যন্তরীণভাবে নিয়মিত ছাত্রদের মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল। তাদের ক্ষেত্রে প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রয়োজন হতো না।

3. শিক্ষার পাঠক্রম

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার জন্য বিস্তৃত ও উপযুক্ত পাঠক্রম অনুসরণ করা হতো। সেই সময়কার সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান ছিল নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্গত।

ব্রাহ্মণ্য বৌদ্ধ ধর্মীয়, ধর্মনিরপেক্ষ, দার্শনিক ও ব্যবহারিক, বিজ্ঞান ও কলা বিদ্যা শিক্ষা প্রভৃতি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পঠন পাঠনের সুযোগ ছিল।

4. শিক্ষাদান পদ্ধতি

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল মূলত আবৃত্তি মূলক। অর্থাৎ আবৃত্তির মাধ্যমে পাঠদান করা হতো। তাছাড়া আলোচনা চক্র, বিতর্ক প্রভৃতি মৌখিক শিক্ষাদান পদ্ধতি অবলম্বন করা হতো

5. গণতান্ত্রিক প্রকৃতির

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছিল সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রকৃতির। অর্থাৎ প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় গণতান্ত্রিকতার জন্য নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়েছিল।

চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন-সাঙ -এর মতে – সংঘের জীবনযাত্রা কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলায় আবদ্ধ থাকলেও ঘর ভাগ করা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কার্যাবলী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনুসরণ করা হতো। তাছাড়া নালন্দার বিপুল সংখ্যক ছাত্র এবং শিক্ষকদের মধ্যে সংহতি বজায় ছিল। অর্থাৎ এখানে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল পিতা পুত্রের মত।

6.শৃঙ্খলা

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বিশেষ দিক হল শৃঙ্খলা। এখানে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করা হতো। অর্থাৎ নালন্দা বিহারে শিক্ষার্থী ও অধ্যাপক সকলেই শৃঙ্খলা বা নিয়ম কানুন মেনে চলতেন।

শয্যা গ্রহণ থেকে শয্যা ত্যাগ পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে কখন কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে তা সুনির্দিষ্ট ছিল। তাই রাজপুত্র এবং সাধারণ পরিবারের সকল সন্তান বা শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ম কানুন মেনে চলতে হতো।

উপসংহার

সর্বোপরি বলা যায়, প্রাচীন ভারতের শিক্ষার বিস্তারে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গৌরবময়। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাল রাজত্বের শেষ দিকে নালন্দার গৌরব ম্লান হয়ে পড়ে। তাছাড়া পরবর্তীকালে মুসলিম সেনাপতি বখতিয়ার খলজির আক্রমণে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।

বর্তমানে সেই ধ্বংসাবশেষের উপর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজন্ম বা দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে। এখানে সরকারিভাবে বিভিন্ন বিষয় অধ্যায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Role of Nalanda University in Education
  • Online Sources

প্রশ্ন – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য কে ছিলেন

উত্তর – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ছিলেন শীলভদ্র। তিনি দর্শন, সাহিত্য এবং বৌদ্ধ ধর্মের একজন পন্ডিত ছিলেন। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের শিক্ষক ছিলেন শীলভদ্র।

প্রশ্ন – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় কে প্রতিষ্ঠা করেন কত সালে

উত্তর – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় গৌতম বুদ্ধের সময়ে পঞ্চম শতাব্দীতে রাজা হর্ষবর্ধন দ্বারা পুনরুদ্ধার এবং পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

প্রশ্ন – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় কে ধ্বংস করেন কত সালে

উত্তর – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেন মুসলিম তুর্কি সেনাপতি বখতিয়ার খলজী, ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে। এর ফলে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাশি রাশি পুস্তক ভান্ডার ভষ্মিভূত হয়ে গেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে – নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে যে রাশি রাশি পুস্তক ভান্ডার ছিল তার আগুন নিভতে সময় লেগেছিল প্রায় তিন মাস।

আরোও পোস্ট পড়ুন

Leave a Comment