সমাজে সংগ্রহশালার ভূমিকা আলোচনা করো | 7 Role Museum in Education and Society

প্রাচীনকালে সংগ্রহশালায় সংগৃহীত বস্তুগুলি গুপ্ত কক্ষে আবদ্ধ থাকতো। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে যখন থেকে সংগ্রহশালা সর্বসাধারণের কাছে উন্মুক্ত হল তখন থেকে সমাজে সংগ্রহশালার ভূমিকা (Museum in Education and Society) বা প্রভাব হল সুদূর প্রসারী।

সমাজে সংগ্রহশালার ভূমিকা | Museum in Education and Society

অতীতে সংগ্রহশালা বলতে কেবলমাত্র প্রাচীন বস্তুর সংরক্ষণকে বোঝানো হতো। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সংগ্রহশালায় সংগৃহীত বস্তু সামগ্রী জনগণের সামনে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হলো। যার ফলে সামাজিক দিক থেকে সংগ্রহশালার ভূমিকা বা গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্থাৎ মানুষের জ্ঞান পিপাসা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহশালার কার্যাবলীর বিস্তার বৃদ্ধি পায় এবং শুধুমাত্র সংগ্রহশালা প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এর সামাজিক মূল্য পরিলক্ষিত হয়।

সমাজের সংগ্রহশালার ভূমিকা কি তা এখানে আলোচনা করা হল –

Museum in Education

1. সামাজিক অতীত ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও সঞ্চালন

সংগ্রহশালার মাধ্যমে সামাজিক অতীত ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও সঞ্চালন করার সহজসাধ্য হয়। অর্থাৎ সংগ্রহশালার মাধ্যমে অতীতের বিভিন্ন বিষয় যথাযথভাবে সংরক্ষিত থাকে এবং তা বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে। তাই সামাজিক গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ ও আঞ্চলনের ক্ষেত্রে সমাজে সংগ্রহশালার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

2. প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ

প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের পাশাপাশি বর্তমানে সংগ্রহ সালাতগুলিতে প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের বস্তু সংরক্ষিত হচ্ছে। যা সামাজিক দিক থেকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন – ভূতাত্ত্বিক, ভূমিরূপ গঠন, বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্দিষ্ট এলাকা ও কঙ্কাল যার বৈজ্ঞানিক মূল্য রয়েছে সেগুলিকে সংরক্ষণ করা।

3. সামাজিক শিক্ষার বিস্তার

সামাজিক শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে সংগ্রহশালার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৫১ সালের সংগ্রহশালার শিক্ষামূলক ভূমিকাকে আন্তর্জাতিকভাবে যথাযথভাবে এবং পরিকল্পনামূলক ভাবনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই সামাজিক শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে সংগ্রহশালা যে সমস্ত, ভূমিকা বর্তমান তা হল –

i) ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়ক শিক্ষা

ii) বিজ্ঞান শিক্ষা

iii) সৃজনশীলতার বিকাশ

iv) ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ

4. বয়স্ক ও গণশিক্ষা প্রদান

বর্তমানে সংগ্রহশালায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার প্রচলন চালু হয়েছে। সংগ্রহশালার মাধ্যমে বয়স্ক ও সাধারণ মানুষদের বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হয়। তবে এটি প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার মতো পাঠক্রম নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা নয়। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে যা কাজে লাগবে সংগ্রহশালা তার উপরে বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করে থাকে।

যেমন – সংগ্রহশালা প্রদর্শনীর মাধ্যমে কোনো অঞ্চলের বা কোনো গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে সাংস্কৃতিক বিষয়কে সচেতন করে। তাই এদিক থেকে সমাজে সংগ্রহশালার ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

5. মূল্যবোধের শিক্ষা

সংগ্রহশালার মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। যা সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ বিভিন্ন ধর্মীয় পুঁথি, জীবনী মূলক গ্রন্থ ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় জনগণের মূল্যবোধের বিকাশে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রামকৃষ্ণ মিশন সংগ্রহশালা, গান্ধী স্মারক সংগ্রহালয় প্রভৃতি সংগ্রহশালাগুলি থেকে ব্যক্তি মূল্যবোধে শিক্ষা পেতে পারেন।

6. স্বাস্থ্য শিক্ষা

সংগ্রহশালার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশ ঘটানো। অর্থাৎ সংগ্রহশালার মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন শিক্ষা লাভ করতে পারে। তবে সংগ্রহশালা সরাসরি স্বাস্থ্যবিদ্যায় ভূমিকা পালন করে না। কিন্তু কিছু কিছু সংগ্রহশালা যেমন – ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ ও তার ব্যবহার নিয়ে প্রদর্শনী করে থাকেন। তাহলে জনগণ ভেষজ উদ্ভিদের গুনাগুন সম্পর্কিত জ্ঞান লাভ করতে পারে। যা তাকে স্বাস্থ্য শিক্ষায় বিশেষভাবে সহায়তা করে।

7. সমাজে আর্থিক উন্নয়ন

অতীতে সংগ্রহশালা কেবলমাত্র পুরনো বস্তুর সংরক্ষণাগার হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে সংগ্রহশালা আর্থিক উন্নতিতে বিশেষভাবে সহায়তা করছে। অর্থাৎ সংগ্রহশালা গুলিকে পর্যটন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করার ফলে সংগ্রহশালার আয় বৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। যেমন –

i) সংগ্রহশালা থেকে উপার্জিত আর্থিক তহবিল সম্পূর্ণ সংগ্রহশালার পরিকাঠামো পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে, যা সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

ii) সংগ্রহশালায় ভ্রমণের গাইড বা পথপ্রদর্শক এর প্রয়োজন হয়। ফলে অনেক সময় সংগ্রহশালা গুলিতে স্থানীয় শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা গাইড হিসেবে কাজ করে। এর ফলের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক উন্নতিও সম্ভব হয়।

iii) সংগ্রহশালা বিদ্যা ও ইতিহাসের স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীরা সংগ্রহশালা বিভিন্ন উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হতে পারে। তাই আর্থিক উন্নতির মাধ্যমে সমাজের সংগ্রহশালার ভূমিকা লক্ষণীয়।

iv) বিভিন্ন সংগ্রহশালায় স্থানীয়দের হস্তশিল্পকে প্রদর্শন করে। ফলে পর্যটকগণ ওইসব স্থানের হস্তশিল্প গুলিকে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে চায়। এর ফলে সেখানে ক্রয়-বিক্রয় চলে ও স্থানীয় লোকজনের আর্থিক উন্নতি সাধন ঘটে।

উপসংহার

সর্বোপরি বলা যায়, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য সমাজে সংগ্রহশালার ভূমিকা (Museum in Education and Society) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সংগ্রহশালা প্রদর্শনীর মাধ্যমে ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয় বা বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্ত বস্তু মানুষের জ্ঞান বিকাশের পাশাপাশি সামাজিক বিকাশে ও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বর্তমানে সংগ্রহশালা মানুষের জ্ঞান পিপাসা চরিতার্থ করার পাশাপাশি সামাজিক বহুমুখী ভূমিকা বিশেষভাবে পালন করে থাকে।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Museum in Education and Society
  • Online Sources

প্রশ্ন – সমাজে জাদুঘরের ভূমিকা?

উত্তর – সমাজে জাদুঘরের ভূমিকা অনবদ্য। কারণ জাদুঘরের মাধ্যমে অতীত ঐতিহ্য গুলিকে সংরক্ষণ করা যায়, আশেপাশে জাদুঘর অতীতের ইতিহাসকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরে। যার ফলে মানুষ অতীত বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করতে পারে।

প্রশ্ন – সংগ্রহশালায় কি সংরক্ষিত থাকে?

উত্তর – সংগ্রহশালায় আবিষ্কৃত বিভিন্ন বস্তু, যেমন – প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান, শিলালিপি, মুদ্রা, বিভিন্ন চিত্র বা শিল্পকলা, প্রাচীন পুঁথি, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংরক্ষিত থাকে।

আরোও পোস্ট পড়ুন

Leave a Comment