গৌড় সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। শশাঙ্কের নেতৃত্বে গৌড়ের উত্থান (Rise of Gauda under Kingdom Sasanka) ঘটে এবং গৌড় সাম্রাজ্য বিস্তৃত লাভ করে।
শশাঙ্কের নেতৃত্বে গৌড়ের উত্থান | Rise of Gauda under Kingdom Sasanka
শশাঙ্ক ছিল গৌড় সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাসক। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতীয় সভ্যতায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন সাম্রাজ্যের মধ্যে বউ রাজ্য ছিল অন্যতম। বিভিন্ন শিলালিপি (গঞ্জাম লিপি), মুদ্রা, ধ্বংসস্তূপ,বানভট্টের হর্ষচরিত, বিদেশি সাহিত্য বা বিবরণী, বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রভৃতি থেকে গৌড় সাম্রাজ্যের উত্থানের ইতিহাস পাওয়া যায়।
পাছাংকর ছিলেন গৌরের পূর্ববর্তী রাজা জয়নাগের বংশধর। অনেকের মতে শশাঙ্ক পরবর্তী গুপ্ত রাজা মহাসেন গুপ্তের এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গৌড়ে ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন।
শশাঙ্কের নেতৃত্বে গৌড়ের উত্থান ঘটেছিল। অর্থাৎ পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের প্রাধান্য থেকে শশাঙ্ক গৌর রাজ্যকে স্বাধীন করে এক সার্বভৌম বাঙালি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন এবং সমগ্র বঙ্গদেশে আধিপত্য বিস্তার করেন। শশাঙ্কের নেতৃত্বে গৌড় সাম্রাজ্যের যে বিস্তার লাভ করেছিল তা এখানে আলোচনা করা হল –
1. রাজ্য বিস্তার
শশাঙ্ক সামান্য সামন্ত রাজা থেকে বিশাল সাম্রাজ্যের বিস্তার করেন। অর্থাৎ সিংহাসনে আরোহন করার পর শশাঙ্ক গৌড় রাজ্য বিস্তারে মনোনিবেশ করেন। গৌড় সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে শশাঙ্ক উত্তর-পশ্চিমবাংলার উপর তার আধিপত্য বিস্তার করেন।
পরবর্তীকালে দক্ষিণে দন্ডভুক্তি (মেদিনীপুর), উৎকল (বালেশ্বর), গঞ্জাম জেলা জয় করে সুবিশাল গৌড় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। শশাঙ্কের গৌড় সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ -এর অন্তর্গত কর্ণসুবর্ণ। তাছাড়া পরবর্তীকালে শশাঙ্ক মগধ, বারানসি, উত্তর ও দক্ষিণ উড়িষা অঞ্চল দখল করে নিজের রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
2. ধর্মমত
সম্রাট শশাঙ্কের আমলে ধর্মের বিকাশ ঘটে। শশাঙ্ক নিজে শিবের উপাসক ছিলেন। আবার বানভট্ট ও হিউয়েন সাং -এর গ্রন্থে শশাঙ্ককে বৌদ্ধ ধর্মবিদ্বেষী হিসাবে অভিভূত করা হয়েছে। তবে সত্যতা কতখানি ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আবার হিউয়েন সাং -এর থেকে জানা যায় যে, শশাঙ্কের রাজত্বকালে বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটেছিল।
3. গৌড় ও মালবের মিত্রতা
শশাঙ্কের নেতৃত্বে গৌড় এবং মালবের মিত্রতা তৈরি হয়। কারণ কনৌজরাজ গ্রহবর্মনের সঙ্গে থানেশ্বরের রাজা প্রভাকর বর্ধনের কন্যা রাজশ্রী বিবাহ হলে ধনেশ্বর ও কনৌজের মধ্যে বিবাদের অবসান ঘটে এবং কনৌজের শক্তি বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে মালবরাজ শশাঙ্কের শরণাপন্ন হয় এবং মালবরাজ দেবগুপ্তের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে কনৌজ ও থানেশ্বরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান করেছিলেন।
4. শশাঙ্ক ও হর্ষবর্ধনের মধ্যে বিরোধ
শশাঙ্কের রাজত্বকালে সম্রাট হর্ষবর্ধন বাংলা রাজ্যের বা গৌড় রাজ্যের কোন ঘনিষ্ঠ করতে পারেননি। কারণ শশাঙ্ক ছিলেন কুর্নীতির দিক থেকে অদ্বিতীয়। থানে স্যারের রাজা রাজ্যবর্ধন শশাঙ্কের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে। সেই যুদ্ধে রাজ্যবর্ধনের মৃত্যু হয়। রাজ্য বর্মনের মৃত্যুতে হর্ষবর্ধন ও কামরূপ রাজা ভাস্কর বর্মনের যৌথ আক্রমণ শশাঙ্কের স্বাধীনতা হরণ করতে পারেনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রাসঙ্গ গৌড় রাজ্যকে তাঁর শক্তি দিয়ে অক্ষুন্ন রেখেছিলেন।
5. কনৌজ আক্রমণ
থানেশ্বরের রাজা প্রভাকর বর্ধনের মৃত্যু হলে শশাঙ্ক এবং দেবগুপ্ত একসঙ্গে কনৌজ আক্রমণ করে। ফলে থানেশ্বর রাজ্যের সঙ্গে গৌড় রাজ্যের যুদ্ধ অবসম্ভাবী হয়ে ওঠে। থানেশ্বরের সিংহাসনে বসে প্রভাকর বর্ধনের জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজ্যবর্ধন বন্দিনী ভগ্নিকে উদ্ধারের জন্য কনৌজের অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু তিনি দেবগুপ্তকে পরাজিত করলেও শশাঙ্কের হাতে নিহত হন।
পরবর্তীকালে গৌড়ের সঙ্গে কনৌজ ও থানেশ্বর রাজ্যের শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। তবে শশাঙ্ক বেঁচে থাকাকালীন গৌড় রাজ্যকে কেউ ক্ষতি করতে পারেননি। তিনি গৌড় রাজ্যকে উন্নত করে তুলতে সচেষ্টা হয়েছিলেন।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, সম্রাট শশাঙ্ক ছিলেন প্রাচীন ভারতবর্ষের অন্যতম শাসক। সর্বভারতীয় রাজনীতি ক্ষেত্রে শশাঙ্ক প্রথম বাংলার প্রশাসক হিসেবে প্রবর্তন করেছিলেন। তাই বিশিষ্ট ঐতিহাসিকবিদ নিহাররঞ্জন রায় এই প্রশাসনকে ‘গৌড়তন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। যাকে অনুসরণ করে পাল রাজারা পরবর্তীকালে বিশাল সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। আবার বিশিষ্ট ঐতিহাসিকবিদ ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন – শশাঙ্ক হলেন প্রথম বাঙালি রাজা যিনি গৌড়ে বা আর্যাবর্তে সার্বভৌম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Rise of Gauda under Kingdom Sasanka
- Online Sources
প্রশ্ন – শশাঙ্ক কোথাকার রাজা ছিলেন
উত্তর – শশাঙ্ক ছিলেন গৌড় রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাজা।
প্রশ্ন – গৌড়ের বর্তমান নাম কি?
উত্তর – গৌড়ের বর্তমান নাম হলো মালদা। এটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম জেলা। প্রাচীন ভারতে গৌড় রাজ্য ছিল সম্রাট শশাঙ্কের শাসনকালে অন্যতম স্বাধীন সার্বভৌম রাজ্য।
প্রশ্ন – গৌড়ের রাজার নাম কি?
উত্তর – গৌড়ের প্রভাবশালী রাজার নাম ছিল শশাঙ্ক। তিনি গৌড় রাজ্যকে স্বাধীন সার্বভৌম রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রশ্ন – গৌড়ের রাজধানী কোথায় ছিল?
উত্তর – গৌড়ের রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ -এর অন্তর্গত কর্ণসুবর্ণ।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
শশাঙ্কের নেতৃত্বে গৌড়ের উত্থান | Rise of Gauda under Kingdom Sasanka সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।