হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম | হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন | Religion of the Harappan Civilization

প্রতিটি সভ্যতার মতো হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন বা ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাই হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম বা ধর্মীয় জীবন (Religion of the Harappan Civilization) ঐতিহাসিকদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

১৯২১ থেকে ২২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ খনন কার্যের ফলে হরপ্পা (হরপ্পা সভ্যতা আবিষ্কার করেন দয়ারাম সাহানি) অঞ্চলে একটি উন্নত নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এটি ইতিহাসের হরপ্পা ও সিন্ধু সভ্যতা নামে পরিচিত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০-১৩০০ অব্দে বর্তমান পাকিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের অঞ্চলজুড়ে হরপ্পা সভ্যতা বিস্তৃত ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম | Religion of the Harappan Civilization

হরপ্পার মত বিশাল সভ্যতার ধর্ম ব্যবস্থা বা ধর্মীয় জীবন কেমন ছিল সে সম্পর্কে তথ্য বেশি পাওয়া যায় না। প্রত্ন তাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন এর উপর ভিত্তি করে হরপ্পা সভ্যতার ধর্ম সম্পর্কে কিছুটা তথ্য পাওয়া যায়।

হরপ্পা সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন মূর্তি, শিলমোহর ও ধ্বংসাবশেষ থেকে সে যুগের মানুষদের ধর্মীয় জীবনযাত্রার নানা নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন –

মূর্তি পূজা

হরপ্পা সভ্যতায় সিন্ধু সভ্যতার মত মূর্তি পূজার প্রচলন ছিল। হরপ্পা সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে মাটির তৈরি নারী মূর্তি এবং নরবলি চিহ্নিত একটি সিল থেকে ঐতিহাসিকগণ বলেন হরপ্পা সভ্যতায় মূর্তি পূজা এবং নরবলি প্রথার প্রচলন ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার মাতৃ পূজার আরেকটি নিদর্শন হল বিভিন্ন মাতৃকা মূর্তি। যেগুলির পায়ের কাছে ভূষা কালীর চিহ্ন পাওয়া গেছে। যা থেকে মনে করা হয় হরপ্পা সভ্যতার মাতৃ পূজার প্রাধান্য ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার একটি সিলে মাথা নিচের দিকে ও পা উপরের দিকে একটি নারী মূর্তি পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন এটি পৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবীর ইঙ্গিত করে এটিকে অঙ্কিত হয়েছে।

হরপ্পার সভ্যতার অন্য একটি সিলে পিপুল গাছের মাঝখানে উপবিষ্ট একটি ব্যক্তির প্রতিকৃতি পাওয়া যায়। যাকে বৃক্ষ দেবতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তাছাড়া তিনমুখ বিশিষ্ট একটি পুরুষের প্রতিকৃতি ও পাওয়া যায়। যাকে ঐতিহাসিক ব্যাসাম ‘ আদি শিব’ বলে গণ্য করেছেন। তাই মনে করা হয় হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা শিবের পূজা করতেন।

প্রকৃতি পূজা

হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে, হরপ্পা সভ্যতার মানুষ প্রকৃতির পূজা করত। যেমন – হরপ্পা সভ্যতার মানুষরা জল, বাতাস, আগুন, আকাশ প্রকৃতিকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করতেন।

তাছাড়া হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা বিভিন্ন প্রাণী যেমন – বৃষ বা ষাঁড়, হাতি, সাপ প্রভৃতির উপাসনা করতেন। এ ছাড়া এক শিং বিশিষ্ট চতুষ্পদ একটি প্রাণীর অস্তিত্ব প্রচুর পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়।

হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা বৃক্ষ পুজো করতেন। এখানে অসত্য গাছ ও পাতার ছবি সহ শীলমোহর পাওয়া গেছে।

উপাসনা গৃহ

হরপ্পা সভ্যতার উপাসনা গৃহ বা মন্দিরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে খনন কাজের ফলে প্রাপ্ত কয়েকটি বাড়িকে অনেকে মন্দির বলে মনে করেন।

বিশিষ্ট ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মার মতে – হরপ্পার সমাজে মন্দির বা পুরোহিত ছিল না। তবে সে যুগের মানুষেরা ভূত-প্রেত ও অশুভ শক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন।

আবার বিশিষ্ট ঐতিহাসিক অধ্যাপক নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছেন – হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা সূর্যের প্রতী গ্রুপের স্বস্তিকা চিহ্ন, পশু বলি ও তাবিজের ব্যবহার করত। এ থেকে হরপ্পা সভ্যতার এক আদিতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে।

অন্তোষ্টিকীয়া

হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা মৃতদেহকে কবর দিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কবর দেয়ার সাথে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রি রাখা হতো।

আবার কোনো কোনো অঞ্চলে মৃতদেহকে দাহ করা বা পোড়ানোর রীতি ছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা পরজন্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তারা মৃতদেহকে যত্ন করে দাহ করতেন বা কবর দিতেন।

উপসংহার

সর্বোপরি বলা যায়, হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা মাটির বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করতে পারতেন। এদের মধ্যে অনেক মূর্তি ধর্মীয় পরিচয় বহন করে। হরপ্পা সভ্যতার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও হরপ্পার আদিবাসীরা একেবারে অধার্মিক ছিল তা নয়। তারা মূর্তি পূজার পাশাপাশি প্রকৃতিকে পূজা করতেন। এই প্রমাণ হরপ্পর বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Online Sources

প্রশ্ন – হরপ্পাবাসী কি ধর্ম পালন করত?

উত্তর – হরপ্পা সভ্যতার খনন কার্যের ফলে বিভিন্ন নারী মূর্তি নিদর্শন পাওয়া গেছে। তাই এ থেকে ঐতিহাসিকরা অনুমান করতে পারেন যে হরপ্পা সভ্যতায় দেবী মাতা বা নারী মূর্তি পূজা করা হতো।

প্রশ্ন – হরপ্পানরা কি উপাসনা করত?

উত্তর – হরপ্পানরা সাধারণত দেবী মা ও শিব পশুপতির পূজা করত। কারণ হরপ্পায় মাটির তৈরি নারী মূর্তি পাওয়া গেছে। তা থেকে মনে করা হয় যে হরপ্পানরা দেবীমার পুজো করতেন।

প্রশ্ন – হরপ্পান মানুষ কোন প্রাণীর পূজা করত?

উত্তর – হরপ্পা সভ্যতার মানুষেরা বিভিন্ন প্রাণী যেমন – বৃষ বা ষাঁড়, হাতি, সাপ প্রভৃতির উপাসনা করতেন। এ ছাড়া এক শিং বিশিষ্ট চতুষ্পদ একটি প্রাণীর অস্তিত্ব প্রচুর পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়।

আরোও পোস্ট পড়ুন

Leave a Comment