দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজ অপশাসনের ও দমননীতির অবসান ঘটাতে গান্ধীজীর নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন (Quit India Movement) -এর ডাক দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ সরকারের দমনীতির বিরুদ্ধে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর পরবর্তীকালে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটাতে গান্ধীজি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলন | Quit India Movement
ইংরেজিতে শাসন নীতির বিরুদ্ধে ১৯৪২ সালে গান্ধীজী হরিজন পত্রিকায় ব্রিটিশ সরকারকে ভারত থেকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। এরপর ১৯৪২ সালের ১৪ই জুলাই কংগ্রেসের অধিবেশনে ওয়ার্কিং কমিটি ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
কংগ্রেসের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাবের মূল দাবি ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানো। তাই গান্ধীজি বলেছিলেন – “পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আর কিছুতেই আমি সন্তুষ্ট হবো না, হয় লক্ষ্য অর্জন, নয় মৃত্যুবরণ”।
তাই ১৯৪২ সালের ৮ই আগস্ট মুম্বাইয়ের অধিবেশনে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। এই আন্দোলন আগস্ট মাসের শুরু করা হয়েছিল বলে এই আন্দোলনের অপর নাম হল আগস্ট আন্দোলন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব
ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রস্তাব কংগ্রেসের অধিবেশনে গৃহীত হওয়ার পর নয় আগস্ট ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সরকার আরো কঠোরতম দমন নীতি গ্রহণ করেন। এই সময় ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসকে বেআইনি দল হিসেবে ঘোষণা করেন।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের শীর্ষ স্থানীয় নেতা গান্ধীজি, জহরলাল, বল্লভ ভাই প্যাটেল সহ বিভিন্ন কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তা সত্ত্বেও এই আন্দোলন থেমে থাকেনি। স্থানীয় জনগণ এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।
ভারতছাড়ো আন্দোলন কেবলমাত্র শহরের সীমাবদ্ধ ছিল না। এটি গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছিল। এই আন্দোলনের প্রভাব এতটাই তীব্র ছিল যে সাধারণ জনগণ সরকারি টেলিগ্রাফ, রেলপথ, সরকারি অফিস প্রভৃতির উপর আক্রমণ শুরু করেন। এমনকি থানা ও আদালত পর্যন্ত বাদ যায়নি।
এই আন্দোলন গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আগুন এর মত ছড়িয়ে পড়েছিল। তাছাড়া উত্তর প্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র এবং বাংলার মেদিনীপুর জেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
বাংলায় ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব
বাংলার (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ) মেদিনীপুর জেলার মহিষাদল, কাঁথি, সুতাহাটা প্রভৃতি অঞ্চলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন গণবিদ্রোহের রূপ নিয়েছিল। তাছাড়া বীরভূম, দিনাজপুর প্রভৃতি জেলাতেও সাধারণ মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দেয়।
১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের তমলুক আদালত ও থানা সাধারণ জনগণ অবরোধ করেন। এর ফলে পুলিশ গুলি চালায় এবং পুলিশের গুলিতে নির্ভীক মাতঙ্গিনী হাজরা সহ বহু সাধারণ আন্দোলনকারী জনগণ প্রাণ হারায়।
উপসংহার
সরপরি বলা যায়, ভারত ছাড়া আন্দোলন (Quit India Movement) -র ফলে ইংরেজ সরকার বুঝতে পেরেছিল যে ভারতে আর তাদের শাসন ও ক্ষমতা বেশিদিন নেই। সরকারি দমনন নীতির চাপেও এই আন্দোলন ব্যর্থ হলেও একেবারে নিষ্ফল হয়নি। তাই ১৯৪২ সালের ভারতছাড়া আন্দোলন ভারতীয় জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসের চরম পর্যায় বলে অভিহিত করা হয়। এই আন্দোলনের ফলে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জন ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – ভারত ছাড়ো আন্দোলন কবে হয়েছিল
উত্তর – ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ ই আগস্ট ভারতছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে মুম্বাইয়ে কংগ্রেসের অধিবেশনে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
প্রশ্ন – ভারত ছাড়ো আন্দোলন কত সালে হয়
উত্তর – ভারত ছাড়া আন্দোলন ১৯৪২ সালে শুরু হয়।
প্রশ্ন – ভারত ছাড়ো স্লোগান কে দিয়েছিলেন?
উত্তর – ভারত ছাড়ো স্লোগান দিয়েছিলেন গান্ধীজী।
প্রশ্ন – করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে কোন আন্দোলনের মন্ত্র ছিল?
উত্তর – ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মূল মন্ত্র ছিল করঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।
প্রশ্ন – ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অপর নাম কি?
উত্তর – ভারত ছাড়ো আন্দোলনের অপর নাম হল অগাস্ট আন্দোলন। কারণ এই আন্দোলনটি ১৯৪২ সালের ৮ই আগস্ট জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে গৃহীত হয়।
প্রশ্ন – ভারত ছাড়ো আন্দোলনের স্লোগান কি ছিল?
উত্তর – ভারত ছাড়ো আন্দোলনের স্লোগান হল – ‘ভারত ছাড়ো’। তাছাড়া গান্ধীজি জনগণের উদ্দেশ্যে স্লোগান দিয়েছিলেন- করঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে বা ‘করো বা মরো’ (Do or Die’.)
প্রশ্ন – ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভাইসরয় কে ছিলেন?
উত্তর – 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভাইসরয় ছিলেন লর্ড লিনলিথগো।
Q. Quit India Movement started in
Ans. – Quit India Movement started in 1942.
Q. Quit India Movement date
Ans. – Quit India Movement dated on August 8, 1942.
প্রশ্ন – করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে কে বলেছিলেন
উত্তর – মহাত্মা গান্ধী ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়া আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেকরেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে বলেছিলেন।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum