১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর ভারতীয় সংবিধান লিপিবদ্ধ ও গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি যখন ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয়, তখন ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা (Preamble to Indian Constitution) উল্লেখ করা হয়।
সংবিধানের প্রস্তাবনা বলতে মুখবন্ধকে বোঝানো হয়। ভারতীয় সংবিধানের এই প্রস্তাবনায় ভারতবর্ষকে বর্ণনা করা হয়। অর্থাৎ ভারতবর্ষ কিরূপ প্রকৃতির তা সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত আছে।
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা | Preamble to Indian Constitution
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অনুসরণ করে রচিত হয়েছে। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনাকে সংবিধানের আত্মা বলে মনে করা হয়। ১৯৫০ সালে ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান যখন কার্যকরী হয়, তখন সংবিধানের প্রস্তাবনয় সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও প্রজাতন্ত্র কথাটি উল্লেখ করা হয়েছিল।
পরবর্তীকালে ১৯৭৬ সালের ৪২ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি কথাগুলি যুক্ত করা হয়। তাছাড়া আজ পর্যন্ত সংবিধানের প্রস্তাবনাটি মাত্র একবার সংশোধন করা হয়েছিল।
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে –
আমরা, ভারতের জনগণ, ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সাধারণতন্ত্র রূপে গড়ে তুলতে এবং এর সকল নাগরিক যাতে :
সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচার, চিন্তার, অভিব্যক্তির, বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা; প্রতিষ্ঠাও সুযোগের সমতা নিশ্চিতভাবে লাভ করেন; এবং তাদের সকলের মধ্যে ব্যক্তি মর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য সুনিশ্চিত করার জন্য যাতে সৌভ্রাতৃত্বের ভাব গড়ে ওঠে;
তার জন্য সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে সংকল্প করে আমাদের সংবিধান সভায় আজ, ২৬ শে নভেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে, এত দ্বারা এই সংবিধান, গ্রহণ করছি, বিধিবদ্ধ করছি এবং নিজেদের অর্পণ করছি।
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলি হল –
1. সার্বভৌমত্ব
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে ‘সার্বভৌম’ শব্দটির তাৎপর্য হল – ভারত রাষ্ট্রই ভারতে বসবাসকারী সকল ব্যক্তি এবং ভারতে অবস্থিত সকল প্রতিষ্ঠানের ওপর চূড়ান্ত কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কি হবে, তা স্থির করতে পারবে।
2. সমাজতান্ত্রিক
ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতে প্রথমে সমাজতান্ত্রিক কথাটি উল্লেখ ছিল না। 1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানে ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে 1976 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, “আমাদের সমাজতন্ত্র আমাদের নিজস্ব রীতির সমাজতন্ত্র। যেসব ক্ষেত্রে আমরা প্রয়োজন মনে করবো সেই সব ক্ষেত্রেই আমরা জাতীয়করণ করব। কেবল জাতীয়করণ করাই আমাদের রীতির সমাজতন্ত্র নয়”।
3. ধর্মনিরপেক্ষতা
ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 1976 সালের 42 তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি যুক্ত করা হয়।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমান। কোনো ধর্মের পক্ষে বা বিপক্ষে রাষ্ট্র হিসেবে ভারত গ্রহণ বা বর্জন করতে পারবে না। সেখানে সকলের সমান সুযোগ ও সমান অধিকার থাকবে।
এখানে ধর্মকে একান্ত ব্যক্তিগত ও বিশ্বাসের বিষয় বলে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ সবাই সবার নিজেদের ধর্ম ও নিয়ম কানুন যথাযথভাবে পালন ও গ্রহণ করতে পারবে। সেখানে রাষ্ট্র কোনরূপ বাধা দেবে না।
4. গণতান্ত্রিকতা
গণতান্ত্রিকতা হল ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ গণতন্ত্র অনুযায়ী সকল ব্যক্তির সুযোগ ও সমান অধিকার বজায় থাকে।
তাছাড়া রাজনৈতিক ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এখানে ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, স্ত্রী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকারী।
5. সাধারণতন্ত্র
সংবিধানের প্রস্তাবনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সাধারণতন্ত্র। সাধারণতন্ত্রের অর্থ হল এই যে – ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হিসাবে রাষ্ট্রপতি হলেন নির্বাচিত, যিনি বংশানুক্রমিকভাবে পদ লাভ করেন না বা করতে পারেন না।
উপসংহার
সংবিধানের প্রস্তাবনা ভারতীয় সংবিধানের আত্মা এবং প্রাণ। এটি সমগ্র ভারতবাসীর বিশেষভাবে অনুসরণ করে থাকেন। তাই ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনার মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, মত প্রকাশ, ধর্ম, বিশ্বাস, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন, সমসুযোগ, জাতীয় ঐক্য সংহতি স্থাপনের মাধ্যমে ভারতবর্ষ তার মহান আদর্শকে তুলে ধরে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – ভারতীয় সংবিধানের পাঁচটি প্রস্তাবনা কি কি?
উত্তর – ভারতীয় সংবিধানের পাঁচটি প্রস্তাবনা হলো – সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, সার্বভৌম এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি।
প্রশ্ন – ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা বলতে কী বোঝ?
উত্তর – সংবিধানের প্রস্তাবনা বলতে মুখবন্ধকে বোঝানো হয়। ভারতীয় সংবিধানের এই প্রস্তাবনায় ভারতবর্ষকে বর্ণনা করা হয়। অর্থাৎ ভারতবর্ষ কিরূপ প্রকৃতির তা সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত আছে।
প্রশ্ন – সংবিধানের প্রস্তাবনায় সকল নাগরিককে কোনটি সুরক্ষিত করা হয়েছে?
উত্তর – সংবিধানের প্রস্তাবনায় সকল নাগরিককে সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতান্ত্রিকতা, সার্বভৌম, জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি, সময় সুযোগ প্রভৃতি সুরক্ষিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন – ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা কোন দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তর – ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সংবিধানের ধারণা থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন – কোন মামলায় প্রস্তাবনাকে ‘সংবিধানের আত্মা’ (Soul of the Constitution) বলা হয়েছে?
উত্তর – 1967 সালের গোলকনাথ বনাম পাঞ্জাব রাজ্যের মামলায় প্রস্তাবনাকে ‘সংবিধানের আত্মা’ (Soul of the Constitution) বলা হয়েছে।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum