যে সমস্ত তথ্যসূত্র কে বিচার বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করে ইতিহাস রচিত হয় সেগুলিকে ইতিহাসের উপাদান বলে। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদানগুলির গুরুত্ব (Literary sources of ancient Indian history) বর্তমান।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় বহু উপাদানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে তোলে। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান গুলির মধ্যে একটি অন্যতম উপাদান হল সাহিত্যিক উপাদান। যা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসকে সমৃদ্ধশালী করে তোলে।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদানগুলির গুরুত্ব | Literary sources of ancient Indian history
প্রাচীন যুগের ভারত ইতিহাসের উপাদান গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, সেগুলি হল –
(ক) ধর্মশাস্ত্র ও সাহিত্য সম্পর্কিত উপাদান
(খ) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান এবং
(গ) বৈদেশিক বিবরণ।
1. ধর্মশাস্ত্র ও সাহিত্য
প্রাচীন ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ধর্মশাস্ত্র ও সাহিত্য। প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের বহু উপাদান ধর্মশাস্ত্র ও সাহিত্য থেকে পাওয়া যায়। ধর্ম শাস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, রামায়ণ-মহাভারত প্রভৃতি।
সাহিত্যের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখযোগ্য। যেমন – বৈদিক সাহিত্য। বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্যগুলি হল – চতুর্বেদ ,সূত্র সাহিত্য ,বেদাঙ্গ প্রভৃতি। এই সমস্ত সাহিত্য থেকে থেকে আর্য আর্যদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবনের বহু অজানা তথ্য জানা যায় ।
তাছাড়া, আর্য অনার্যদের সমকালীন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের এবং রাজনৈতিক সংঘাতের বহু তথ্য জানা যায়। এই সাহিত্যিক উপাদান গুলি থাকে।
ধর্মশাস্ত্র ও সাহিত্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিকগুলি হল –
পুরাণ সাহিত্য
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে পুরাণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। , পুরাণের মধ্যে কিংবদন্তি ও ঐতিহাসিক তথ্য এমন ভাবে মিশে আছে যে খুব সতর্কতার সঙ্গে গ্রহণ না করলে ভুল তথ্য এসে যেতে পারে।
ভারতে দুই জনপ্রিয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত থেকে বহু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। যা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সমস্ত রচনা থেকে প্রাচীন রাজবংশগুলির কীর্তিকলাপ এবং সভ্যতার বিস্তার সম্পর্কে বহু ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। তাই প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদানগুলির গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়।
বৌদ্ধ ধর্ম ও গ্রন্থ
ভারত ইতিহাস রচনার একটি প্রধান উপাদান হল বৌদ্ধ ধর্ম সাহিত্য। তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থলী থেকে বহু অজানা তথ্য পাওয়া যায়। ‘জাতক’ এর কাহিনীগুলি থেকে বুদ্ধের জীবনী ও সমসাময়িক সামাজিক অবস্থার কথা জানা যায়।
তাছাড়া সিংহলীয় বৌদ্ধ সাহিত্য ‘দ্বীপবংশ’ ও ‘মহাবংশ’ গ্রন্থ থেকে বুদ্ধের জীবনী ও চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের বংশ পরিচয় সম্বন্ধে বহু অজানা তথ্য জানা যায়। যা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
জৈন ধর্ম ও গ্রন্থ
জৈন গ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভগবতী সূত্র ‘ও ‘আচরঙ্গসূত্র’ এগুলি থেকেও বহু তথ্য জানা যায়। তাই জৈন গ্রন্থ গুলি প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান হিসেবে পরিগণিত হয়।
2. প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান
প্রাচীন ভারতে খননকার্যের ফলে যে সমস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন সেগুলি ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – বোখাজকোয় এবং নকসিরুস্তম শিলালিপি।
তাছাড়া ভারতের অভ্যন্তরে ও বাইরে আবিষ্কৃত হয়েছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান, যা ভারত সভ্যতার বহু অজ্ঞাত তথ্য মানব সমাজের সামনে উপস্থাপিত করেছে।
3. বৈদেশিক বিবরণ
বৈদেশিক বিভিন্ন বিবরণ প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদানগুলির গুরুত্ব মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ বিদেশী লেখক ও পর্যটকদের বিবরণ থেকে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের বহু মূল্যবান উপাদান পাওয়া যায়।
গ্রীকদের বিবরণ যেমন – ঐতিহাসিক হেরোডোটাস ও টেসিয়াস গ্রন্থ থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে পারসিক আক্রমণের বিবরণ পাওয়া যায়। তবে অনেকে বলেন এটি জনশ্রুতির ভিত্তিতে এই গ্রন্থ রচনা করা হয়েছে।
এছাড়া চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের রাজসভায় এসেছিলেন গ্রিকদূত মেগাস্থিনিস। মেগাস্থিনিসের রচিত ইন্ডিকা গ্রন্থ মৌর্য যুগের থেকে ইতিহাসের নানা অজানা বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায়।
চিনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময় ভারতে আসেন। ফা-হিয়েন রচিত কো-কুয়ো-সিং গ্রন্থে ভারত সংক্রান্ত বহু তথ্য উল্লেখ করেন। আবার হিউয়েন-সাঙ রচিত সে-ইউ-কাই গ্রন্থ থেকে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালের বিস্তৃত বিবরণ ও ভারতবাসীর সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়।
উপসংহার
সরাসরি বলা যায়, প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদানগুলির গুরুত্ব অপরসীম। প্রাচীন ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবন ও ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান সংক্রান্ত তথ্য এই সমস্ত উপাদান থেকে পাওয়া যায়। ফলে তৎকালীন মানুষের যাবতীয় ইতিহাস সম্পর্কে সহজে একটি ধারণা গঠন করা যায়।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – প্রাচীন ভারতের যে কোন দুটি সাহিত্যিক উপাদানের নাম লেখ।
উত্তর – প্রাচীন ভারতের যেকোন দুটি সাহিত্যিক উপাদানের নাম হল ধর্মশাস্ত্র ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
1 thought on “প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় সাহিত্যিক উপাদানগুলির গুরুত্ব | Literary sources of ancient Indian history”