বৌদ্ধ ধর্মের সমসাময়িক হল জৈন ধর্ম। ২৪ জন তীর্থঙ্কর নিয়ে জৈন ধর্মের বিকাশ লাভ হয়েছিল। জৈন ধর্মের মূলনীতি (Principles of Jainism) গুলি ভারতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।
বৌদ্ধ ধর্ম এবং জৈন ধর্ম ছিল সমসাময়িক দুটি ভিন্ন প্রকৃতির ধর্ম। মহাবীরকে জৈন ধর্মের প্রবর্তক বলে মনে করা হলেও, জৈন ধর্মাবলম্বী মনে করেন যে তার আগেও ২৩ জন তীর্থঙ্কর জৈন ধর্মকে পরিপূর্ণ করেছিল। এখানে জৈন ধর্ম কি এবং জৈন ধর্মের মূলনীতি গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
জৈন ধর্ম
জৈন ধর্মের সর্বপ্রথম তীর্থঙ্কর ছিলেন ঋষভদেব বা আদিনাথ এবং সর্বশেষ বা ২৪ তম তীর্থঙ্কর হলেন মহাবীর। তবে এই ২৪ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে ২২ জনের কোনো ঐতিহাসিক প্রামাণ্য পাওয়া যায় না। ত্রয়বিংশ তীর্থঙ্কর হিসেবে পার্শ্বনাথ বা পরেশনাথ সমন্ধে জৈন ধর্ম গ্রন্থে কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।
জৈন ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর ছিলেন মহাবীর। যিনি পার্শ্বনাথ বা পরেশনাথ প্রবর্তিত ধর্মের সংস্কার করেছিলেন মাত্র। মহাবীর ৩০ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে দীর্ঘ 12 বছর কঠোর সাধনার পর কৈবল্য বা সিদ্ধিলাভ করেন এবং জিতেন্দ্রীয় নামে পরিচিত হন।
কৈবল্য বা সিদ্ধিলাভ করার পর মহাবীর ৩০ বছর ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মগধ, কোশল, বৈশালী, রাজগৃহ প্রভৃতি স্থানে ধর্ম প্রচারের মাধ্যমে জৈন ধর্মকে প্রসারিত করেন। ভারতের তৎকালীন রাজারাও মহাবীরকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন। ৪৬৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ৭২ বছর বয়সে মহাবীর রাজগীরের নিকটবর্তী পাবা নামক স্থানে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেন।
জৈন ধর্মের মূলনীতি | Principles of Jainism
বিভিন্ন তীর্থঙ্কর জৈন ধর্মকে প্রসারিত করেছিল তাদের মধ্যে শেষতম তীর্থঙ্কর হিসেবে মহাবীরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জৈন ধর্মের মূলনীতি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। জৈন ধর্মের মূলনীতি গুলি এখানে আলোচনা করা হল –
1. চতুর্যাম
জৈন ধর্মের মূলনীতি হল চতুর্যাম। জৈন ধর্মের ২৩ তম তীর্থঙ্কর পার্সোনাল চারটি নীতি পালনের উপদেশ দেন, যেটি চতুর্যাম নামে পরিচিত। এই চারটি নীতি হল –
i) অহিংসা বা হিংসা না করা,
ii) মিথ্যা কথা না বলা,
iii) চুরি না করা এবং
iv) কোনো বস্তুর প্রতি লোভ না করা।
2. পঞ্চমহাব্রত
জৈন ধর্মের ২৪ তম তীর্থঙ্কর বা শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর চতুর্যাম নীতির সঙ্গে একটি নতুন নীতি যোগ করেন। এই নীতিগুলিকে একত্রে পঞ্চমহাব্রত নীতি বলা হয়। মহাবীর এক্ষেত্রে ব্রহ্মচর্যকে যুক্ত করে ব্যক্তিকে জিতেন্দ্রিয় হওয়ার উপদেশ দেন।
জৈন ধর্মে পঞ্চমহাব্রত হল – অহিংসা, সত্যবাদিতা, অচৌর্য, অপরিগ্রহ এবং ব্রহ্মচর্য।
3. ত্রিরত্ন
জৈন ধর্মে ব্যক্তির কর্মফল ও জনমান্তরবাদ -এর হাত থেকে মুক্তির জন্য তিনটি মূলনীতি বা আদর্শ পালনের কথা বলা হয়েছে। এগুলোকে একত্রে ত্রিরত্ন বলা হয়।
জৈন ধর্মে ত্রিরত্ন নীতি হল – সৎ বিশ্বাস, সৎ আচরণ এবং সৎ জ্ঞান। এগুলি পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি সিদ্ধশিল এবং কর্মফল ও পুনর্জন্মের হাত থেকে মুক্তি পাবে।
4. সর্বপ্রাণবাদ
জৈন ধর্মের মূলনীতি হল সর্বপ্রাণবাদ। এই নীতি অনুযায়ী বা ধর্ম মত অনুযায়ী সমস্ত কিছু যেমন – গাছপালা, পাথর, নদী, পর্বত, পাহাড় প্রভৃতির মধ্যে প্রাণ রয়েছে।
তাই জৈন ধর্মে এই নীতির উপর ভিত্তি করে মানুষকে হিংসামূলক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। জৈন ধর্মে অহিংসা নীতির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়।
5. শুদ্ধ জীবন
জৈন ধর্মে ২৪ তম তীর্থঙ্কর মহাবীর মানুষের জীবনকে শুদ্ধ করার জন্য কতগুলি পদ্ধতি বা নিয়ম মেনে চলার কথা বলেন। সেগুলি হল – উপবাস, তপস্যা, অহিংসা, সংযম, মিতব্যয়িতা প্রভৃতি।
মহাবীর মনে করেন ব্যক্তি এই নীতিগুলি পালনের মাধ্যমে নিজের জীবনকে শুদ্ধ করতে পারবে। তাছাড়া আরও কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের দ্বারা ব্যক্তির মুক্তি লাভ করবে। এইভাবে জৈন ধর্মে ব্যক্তিকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করা হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় অর্থনৈতিক জীবনের উপর জৈন ধর্মের মূল নীতিগুলির প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জৈন ধর্ম সর্বপ্রথম বর্ণ বিভক্ত ভারতীয় সমাজের মধ্যে সমস্ত মানুষের সমান অধিকারের কথা প্রচার করেন।
তাছাড়া সৎ কাজ কর্মের মাধ্যমে মানুষই মোক্ষলাভ করতে পারবে – জৈন ধর্মের এই নীতিটি তৎকালীন সমাজের চুরি, ডাকাতি, রাজহানি, মিথ্যাচার প্রভৃতির কুপ্রভাব থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।
এছাড়াও জৈন ধর্মের অহিংসার আদর্শ যুদ্ধের অপ্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তা প্রচারের ফলে পশু হত্যা বন্ধ হয় এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। তাই তৎকালীন সমাজের জৈন ধর্ম সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – জৈন ধর্ম গ্রন্থের নাম কি
উত্তর – জৈনদের নির্দিষ্ট ধর্ম গ্রন্থ নেই। তবে জৈন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ গুলো আগম বা জৈন আগম হিসেবে পরিচিত। এগুলো জৈন তীর্থঙ্করদের উপদেশের সংকলন। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে পাটলিপুত্রে আহ্বান করা জৈনদের এক সভায় মহাবীরের উপদেশ গুলি বারোটি অঙ্গে সংকলিত করা হয়। যা দ্বাদশ অঙ্গ নামে খ্যাত। এই দ্বাদশ অঙ্গ প্রাকৃত ভাষায় লেখা।
প্রশ্ন – জৈন ধর্মের ত্রিরত্ন কি
উত্তর – জন্মান্তরবাদ এবং কর্মফলে থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জৈন ধর্মের তিনটি পদ্ধতি কথা বলা হয়েছে এগুলিকে ত্রিরত্ন বলে। অর্থাৎ সত্য বিশ্বাস বা সৎ বিশ্বাস, সত্য জ্ঞান বা সৎ জ্ঞান এবং সত্য আচরণ বা সৎ আচরণ হল জৈন ধর্মে ত্রিরত্ন। এই তিনটি গুন বা ত্রিরত্নের সাহায্যে ব্যক্তি পরম শুদ্ধ আনন্দ বা আত্মার মুক্তি লাভ করতে পারে বা সিদ্ধশিলা লাভ করতে পারে।
প্রশ্ন – জৈন ধর্মের প্রবর্তক কে
উত্তর – জৈন ধর্মের প্রবর্তক হলেন মহাবীর। তবে যৌনরা মনে করেন যে মহাবীর এর আগেও তেইশ জন তীর্থঙ্কর জৈন ধর্মকে পরিপুষ্ট করেছিল।
Q. 5 principles of Jainism
Ans. – 5 principles of Jainism are –
i) Ahiṃsa (Non-violence)
ii) Satya (Truth)
iii) Asteya (Non-stealing)
iv) Brahmacharya (Chastity)
v) Aparigraha (Non-possession)
Q. Three principles of Jainism
Ans. – The three principles of Jainism are Right Knowledge, Right Faith, and Right Conduct. The three principles of Jainism also known as the “Triratna” or “Three Jewels”.
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum