জৈন ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের থেকে প্রাচীন প্রকৃতির হলেও জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম সমসাময়িক ধর্ম হিসেবে গণ্য করা হয়। বিভিন্ন সাদৃশ্য থাকলেও জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Jainism and Buddhism) বিভিন্ন দিক থেকে বর্তমান।
জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে পার্থক্য | Difference between Jainism and Buddhism
বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা হলেন ভগবান গৌতম বুদ্ধ। তিনি আনুমানিক ৫৬৬ খ্রিস্টাব্দে কপিলাবস্তু রাজ্যে বংশের জন্মগ্রহণ করেন।
কিন্তু পরবর্তীকালে যাবতীয় সুখ ও ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়ে নির্বাণ লাভের জন্য গৃহত্যাগ করেন। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে কঠোর তপস্যার মাধ্যমে তিনি বোধি জ্ঞান বা দিব্য জ্ঞান লাভ করে এবং তার পর থেকে বৌদ্ধ ধর্মের মহান শান্তির বাণী প্রচার করেন।
আর অপরদিকে জৈন ধর্মের প্রবক্তা হলেন মহাবীর। তবে মহাবীরের আগে 23 জন তীর্থঙ্কর জৈন ধর্মকে পরিপুষ্ট করেছিলেন। মহাবীর ছিলেন জৈন ধর্মের শেষ তীর্থঙ্কর।
আনুমানিক ৫৪০ খ্রিস্টাব্দে বিহারের মজফরপুর জেলায় মহাবীরের জন্ম হয়। ছোটবেলায় তার নাম ছিল বর্ধমান। তিনি ৩০ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন এবং দীর্ঘ 12 বছর কঠোর তপস্যার মাধ্যমে কৈবল্য বা সিদ্ধি লাভ করেন।
কৈবল্য বা সিদ্ধি লাভ করার পর তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের মগধ, কৌশল, মিথিলা, নালন্দা, ঐশালী, রাজগৃহ প্রভৃতি স্থানে জৈন ধর্মকে প্রচারের মাধ্যমে প্রসারিত করে।
বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম তৎকালীন সমাজে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল। এই দুই ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার দিক থেকে মিল থাকলেও কিছু অমিল বা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Jainism and Buddhism) গুলি এখানে উল্লেখ করা হল –
1. অহিংসা নীতি
জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে অহিংসা নীতিগত পার্থক্য বর্তমান। বৌদ্ধ ধর্মে অহিংসার কথা বলা হলেও জৈন ধর্মে কঠোরভাবে অহিংসা নীতি মেনে চলা হয়। এমনকি জৈনরা ক্ষুদ্র কিট পতঙ্গকে হত্যা করা পাপ বলে মনে করেন।
2. প্রচারক
বৌদ্ধ ধর্ম কেবলমাত্র গৌতম বুদ্ধ প্রচার ও সম্প্রসারণ করেছিলেন। কিন্তু জৈন ধর্ম ২৪ জন তীর্থঙ্কর এর মাধ্যমে প্রচার ও প্রসারিত হয়েছিল। তবে জৈন ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীরকে গণ্য করা হয়।
3. প্রসার
বৌদ্ধ ধর্ম ভারতের অভ্যন্তরে জৈন ধর্মের তুলনায় অনেক বেশি প্রসারিত হয়েছিল। তাছাড়া ভারতবর্ষের বাইরেও বহু দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে।
আর অপরদিকে জৈন ধর্ম সমগ্র ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের মত প্রসারিত না হলেও এখনো ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে জৈন ধর্ম পরিলক্ষিত হয়।
4. সর্বপ্রাণ বাদ
জৈন ধর্মে বিশ্বাসী মানুষেরা সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তারা পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতেন। আবার অপরদিকে বৌদ্ধরা সর্বপ্রাণবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না।
5. জাতিভেদ প্রথা
জৈন ধর্মে খুব বেশি জাতিভেদ প্রথাকে খুব বেশি অগ্রাহ্য করা হয়নি। কারণ জৈনরা হিন্দু ধর্মের বহু রীতিনীতি গ্রহণ করেছিল। অর্থাৎ জৈনরা হিন্দুদের মত জাতিভেদ কোথায় বিশ্বাসী ছিলেন।
আবার অপরদিকে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতিবাদস্বরূপ বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান হয়। তাই বৌদ্ধ ধর্ম জাতিভেদ প্রথা ও হিন্দু ধর্মীয় রীতি-নীতির তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। যেমন – ব্রাহ্মণদের যাগ-যজ্ঞ, পশু বলি প্রভৃতি।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে প্রতিবাদী ধর্ম হিসেবে জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান ঘটে। কোনো ধর্মের সাথে অপর ধর্মের মিল না থাকলেও কিছু কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের মধ্যে কর্মফল, জন্মান্তরবাদ, মূর্তি পূজা প্রভৃতি দিক থেকে কিছু কিছু সাদৃশ্য থাকলেও এই দুই ধর্ম একেবারে ছিল স্বতন্ত্র প্রকৃতির। অর্থাৎ এই দুই ধর্মের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য এই দুই ধর্মকে সম্প্রসারিত করেছিল এ কথা বলা যায়।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Difference between Jainism and Buddhism
- Online Sources
প্রশ্ন – জৈন ধর্ম না বৌদ্ধ ধর্ম কোনটি প্রাচীন?
উত্তর – জৈন ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের চেয়ে প্রাচীন । এটি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে উদ্ভূত হয়েছিল এবং বৌদ্ধধর্ম খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে উদ্ভূত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
প্রশ্ন – জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর – জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠা হলেন ২৪ তম তীর্থঙ্কর মহাবীর। তবে আগের ২৩ জন তীর্থঙ্কর দ্বারা জৈন ধর্ম বিস্তার লাভ করেছিল। আর বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহাজ্ঞানী গৌতম বুদ্ধ।
প্রশ্ন – জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান ও বিকাশের কারণ?
উত্তর – বিশেষ করে প্রাচীন ভারতে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের আড়ম্বরতা, জাতিভেদ প্রথা, পশু বলি, যাগ-যজ্ঞ, তন্ত্র মন্ত্র প্রভৃতির বিরুদ্ধে বিশেষ করে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতিবাদ স্বরূপ জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ এই দুই প্রতিবাদী ধর্মের উত্থান ও বিকাশ হয়েছিল।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কারণ | 10 Reasons for the Fall of the Roman Empire
- প্রাচীন রোমের দাস ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা | Slavery in Ancient Rome
- মানব বিবর্তনের ইতিহাস বা পর্যায় সমূহ | History of Human Evolution
- ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রশ্ন উত্তর | Fort William College Quiz Question and Answers
- বাংলা গদ্য সাহিত্যে শ্রীরামপুর মিশনের অবদান | Contribution of Serampore Mission to Bengali Prose
- বাংলা গদ্যের বিকাশে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অবদান | Contribution of Fort William College Bengali Prose
জৈন ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে পার্থক্য | Difference between Jainism and Buddhism পোস্টটি সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ।