পৃথিবীতে দীর্ঘদিন প্রাচীন প্রস্তর যুগ চলার পর ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে জীবনযাত্রার পরিবর্তন আসে। তারপরে সূচনা হয় মধ্য প্রস্তর যুগের। প্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Mesolithic Age) ছিল অনেকটা উন্নত প্রকৃতির।
প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষেরা পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত। কিন্তু তারা কৃষিকাজ জানত না। তাই প্রাচীন প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রা ছিল বন্যপ্রকৃতির। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তাভাবনা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ফলে মধ্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়।
মধ্য প্রস্তর যুগ কাকে বলে
প্রাচীন প্রস্তর যুগের ইতিহাস ছিল দীর্ঘমেয়াদী। অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ধরে প্রাচীন প্রস্তর যুগ চলার পর ধীরে ধীরে হাতিয়ার, খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতি এবং জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন সূচিত হয়। এই সময়কালকে মধ্য প্রস্তর যুগ বলা হয়ে থাকে।
Mesolithic Age Picture
তাই প্রাচীন প্রস্তর যুগের অবসানের সাথে সাথে মধ্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়ে থাকে। সুতরাং প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কাল হল মধ্য প্রস্তর যুগ।
ঐতিহাসিকবিদগণ খ্রিস্টপূর্ব 15000 বছর থেকে 10000 বছরের মধ্যবর্তী সময়কালকে মধ্যপ্রস্তর যুগ হিসেবে অনুমান করে থাকেন।
মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য | Characteristics of Mesolithic Age
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা প্রাচীন প্রস্তর যুগের থেকে কিছুটা হলেও উন্নত প্রকৃতির ছিল। মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Mesolithic Age) যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –
1. জীবনযাত্রার মান
পৃথিবীর প্রকৃতিগত বা ভৌগোলিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মধ্য প্রস্তুত যুগের মানুষের মধ্যে জীবনধারা গত পরিবর্তন সূচিত হয়। এই সময় তুষার যুগের অবসান ঘটে। এই সময় সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পায় ফলে নতুন নতুন বনাঞ্চল এবং মরুভূমির জন্ম হয়। মানুষের মধ্যে জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন ঘটে।
2. খাদ্যাভ্যাস
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের কিছুটা পরিবর্তন হয়। তবে মূলত বন জঙ্গলের ফলমূল, পশু শিকার এবং সামুদ্রের মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। তাছাড়া মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা কুকুর, গরু, ছাগল প্রকৃতি প্রাণীকে পোষ মানাতে শিখেছিল।
3. হাতিয়ার এর ব্যবহার
প্রাচীন প্রস্তর যুগের হাতিয়ারের থেকে মধ্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ারের মধ্যে পরিবর্তন সূচিত হয়। মধ্য প্রস্তর যুগে পাথরের হাতিয়ারের আকৃতিগত পরিবর্তন সূচিত হয়। অর্থাৎ প্রাচীন প্রস্তর যুগের মত মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করলেও তা অনেকটা ছোট প্রকৃতির এবং ধারালো ছিল।
তাছাড়া বিভিন্ন পশুর হাড় মধ্য যুগের মানুষেরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শিখেছিল। অর্থাৎ পাথরের সঙ্গে সঙ্গে মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা বিভিন্ন পশুর হাড়ের সাহায্যে হালকা এবং ছোট আকারের হাতিয়ার তৈরি এবং ব্যবহার করতে শিখেছিল।
এছাড়া বিভিন্ন পশুর শিং, হরিণের হাড় প্রভৃতি দিয়ে তারা গহনার মত জিনিস তৈরি করতে শিখেছিল। উত্তরপ্রদেশে বেশ কিছু অঞ্চলে পশুদের হাড়ের তৈরি গলা ও কানের বিভিন্ন গয়নার সন্ধান পাওয়া যায়।
4. যাতায়াত ব্যবস্থা
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের মধ্যে যাতায়াত ব্যবস্থার মধ্যে পরিবর্তন সূচিত হয়। এই যুগের মানুষেরা যাতায়াতের জন্য জলপথের ব্যবহার করেছিল। তাছাড়া বড় বড় কাঠের গুড়ি দিয়ে নৌকা তৈরি শুরু হয় এই মধ্যযুগ থেকে।
5. কৃষিকাজ
মধ্যযুগের মানুষের মধ্যে কৃষিকাজ করার ইতিহাস পাওয়া যায়। বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ মনে করেন মধ্য প্রস্তর যুগের শেষ দিকে মানুষেরা কৃষিকাজের ব্যবহার শেখে।
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা ফসল পেশাই করার জন্য পাথরের তৈরি জাঁতার মতো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে শিখেছিল। রাজস্থানে এইরকম যন্ত্রপাতি খনন কার্যের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
6. বাসস্থান
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা গুহায় বসবাস করতে শুরু করে। ফলে এ যুগের মানুষের মধ্যে জীবন যাপনের বিভিন্ন চিত্র গুহার মধ্যে পাওয়া যায়। তাছাড়া মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষেরা মৃতদেহকে সমাধিস্ত করত। গুজরাট, পাঞ্জাব, রাজস্থান প্রভৃতি অঞ্চলে এবং রাশিয়া, সুইডেন প্রভৃতি দেশে মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের বাসস্থানের চিহ্ন পাওয়া যায়।
উপসংহার
তাই বলা যায়, প্রাচীন প্রস্তর যুগের তুলনায় মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার মানের কিছুটা উন্নতি সাধন হয়েছিল। তারা জীবন ধারণের জন্য বিভিন্ন কৌশল অর্জন করেছিল। তাই মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষের বিভিন্ন নিদর্শন ভারতবর্ষ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাওয়া গেছে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – মধ্য প্রস্তর যুগের সময়সীমা কত
উত্তর – ঐতিহাসিকবিদ্গণ মনে করেন আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 15000 বছর থেকে 10000 বা 5000 বছর পর্যন্ত মধ্য প্রস্তর যুগের সময়সীমা বিস্তৃত ছিল।
- ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল | Immediate Cause of French Revolution
- 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস বক্তব্য | 26 January Republic Day Speech
- DIET এর কার্যাবলী আলোচনা করো | 10 Functions of DIET
- HS History Suggestion 2025 | উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস সাজেশন 2025
- NCERT গঠন ও কার্যাবলী আলোচনা | Structure and Functions of NCERT
- NCTE এর কার্যাবলী আলোচনা করো | 10 Functions of NCTE
2 thoughts on “মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য | 6 Characteristics of Mesolithic Age”