১৯৩০ -এর দশকে ভারতে ব্রিটিশদের অপশাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা, লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা প্রভৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আইন অমান্য আন্দোলন (Civil Disobedience Movement)-এর সূত্রপাত হয়।
ভারতের ব্রিটিশ শাসনকালে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুব সংকটজনক হয়ে ওঠে। তাছাড়া সেই সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা, লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা, সন্ত্রাসবাদীদের উত্থান, শ্রমিক আন্দোলন প্রভৃতি ঘটনা পরিপেক্ষিতে গান্ধীজী ১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
আইন অমান্য আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা | Civil Disobedience Movement
ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে গান্ধীজি ১৯২০ সালের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলন পরবর্তীকালে গান্ধীজি নিজেই বন্ধ করে দেন। এর ঠিক দশ বছর পর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ৩০ শে জানুয়ারি ব্রিটিশ সরকারের কাছে ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় গান্ধীজি ১১ দফা দাবি প্রকাশ করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই প্রস্তাবগুলিকে অগ্রাহ্য করেন। ফলে গান্ধীজি খুবই ক্ষুদ্ধ হন।
গান্ধীজীর প্রস্তাবিত ১১ দফা দাবি ব্রিটিশ সরকার না মানার ফলে ১৯৩০ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি গুজরাটের সবরমতি আশ্রমে গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচি
গান্ধীজীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম কর্মসূচি গুলি ছিল – লবণ আইন, কর প্রদানের আইন প্রভৃতি বিষয়ে সরকারি আইন অমান্য করা, সরকারি দপ্তর বর্জন করা, ব্রিটিশদের তৈরি স্কুল কলেজ বর্জন করা প্রভৃতি।
আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা
গান্ধীজীর নেতৃত্বে আইন আন্দোলন প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর 1930 সালের 12ই মার্চ সবরমতী আশ্রম থেকে ৭৮ জন আন্দোলনকারীকে নিয়ে গান্ধীজি ২০০ মাইল দূরে সমস্ত উপকূলে অবস্থিত ডান্ডি অভিযান করেন।
গান্ধীজী ৬ই এপ্রিল ডান্ডিতে উপস্থিত হয়ে বৃটিশ সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন। অনেকে এটি লবণ আন্দোলন হিসাবে গণ্য করেন। লবণ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে গান্ধীজি সর্বপ্রথম আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য
আইন অমান্য আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য হল এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন। যেমন – লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা, লবণ আইন, কর আইন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা প্রভৃতির বিরুদ্ধে গান্ধীজীর নেতৃত্বে গঠিত আন্দোলন।
i) গান্ধীজী অহিংসা নীতির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে বিস্তার সাধন করেছিলেন।
ii) এই আন্দোলন ছিল সারা দেশব্যাপী গণ আন্দোলন।
iii) এই আন্দোলনে নারীরা দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন।
iv) ব্রিটিশদের দমন নীতির বিরুদ্ধেও এই আন্দোলন গণ-আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল।
আইন অমান্য আন্দোলনের বিস্তার
গান্ধীজীর আইন অমান্য আন্দোলনের সূত্রপাত হিসেবে লবণ আইন অমান্যকে কেন্দ্র করে সারা ভারতবর্ষে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই আন্দোলন কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, বাংলা, বিহার, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি বড় বড় শহরে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
গুজরাটের ধরসানা ও ওয়াল্ডার অঞ্চলে গান্ধীজী স্বয়ং আইন অমান্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাছাড়া সরোজনী নাইডু ও আব্বাস তায়েবজিকে এই আন্দোলন পরিচালনার অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার গ্রেফতার করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনে মুসলিম সমাজের মধ্যে মৌলানা আজাদ, ডঃ আনসারী প্রমুখ ও জাতীয়বাদী নেতা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া গান্ধীজীর মন্ত্র শিষ্য সীমান্ত গান্ধী (খান আব্দুল গফফর খাঁ) এই আন্দোলনের অংশগ্রহণ করেন ও উপজাতিদের সঙ্ঘবদ্ধ করে লালকোর্তা বাহিনী গঠন করেন।
আইন অমান্য আন্দোলনের আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা থেকে ব্রিটিশ সরকার দমন নীতির আশ্রয় নেয়। গান্ধীজী সহ প্রায় ৮০-৯০ হাজার আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেন। ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসকে বেআইনি বলে ঘোষণা করেন। তাছাড়া মহারাষ্ট্র এই আন্দোলন দমন করার জন্য সেনাবাহিনী নামানো হয়।
আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার বন্ধ করতে ব্রিটিশ সরকার ৫৫ টি ছাপাখানা এবং ৬৭ টি সংবাদপত্র বন্ধ করে দেন। ফলে ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির চাপে আন্দোলনের গতি কমে গিয়েছিল।
তাছাড়া ব্রিটিশ সরকার ও গান্ধীজীর সঙ্গে প্রথম গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরবর্তীকালে ১৯৩১ সালে বড়লাট আরউইনের মধ্যে গান্ধীজীর দীর্ঘ আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৩১ সালের ৫ই মার্চ গান্ধী-আরউইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি অনুসারে গান্ধীজি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন।
কিন্তু নানা কারণে দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক ব্যর্থ হয় এবং গান্ধীজি শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন ও পুনরায় আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি আরও বৃদ্ধি পায় ফলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। এর ফলে গান্ধীজি ১৯৩৪ সালে মে মাসে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহের নির্দেশ দেন।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের মতো আইন অমান্য আন্দোলন জাতীয় সংগ্রামকে সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনের পর্যায়ে পরিণত করেছিল। এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পেরেছিল যে নিছক দমননীতির মাধ্যমে এই জাতীয় আন্দোলন কে প্রচলিত করা যাবে না।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Civil Disobedience Movement India
- Online Sources
প্রশ্ন – আইন অমান্য আন্দোলন কত সালে হয়
উত্তর – আইন অমান্য আন্দোলন 1930 সালে হয়।
প্রশ্ন – আইন অমান্য আন্দোলন কোথায় হয়েছিল
উত্তর – ১৯৩০ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি গুজরাটের সবরমতি আশ্রমে গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করেন।
প্রশ্ন – আইন অমান্য আন্দোলন কবে হয়েছিল
উত্তর – আইন অমান্য আন্দোলন হয়েছিল ১৯৩০ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি।
প্রশ্ন – আইন অমান্য আন্দোলন কেতিয়া আৰম্ভ হৈছিল
উত্তর – আইন অমান্য আন্দোলন ১৯৩০ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি আৰম্ভ হৈছিল।
প্রশ্ন – আইন অমান্য আন্দোলন কবে শেষ হয়
উত্তর – ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আইন অমান্য আন্দোলন শেষ হয়।
Q. Civil disobedience movement year
Ans. – Civil disobedience movement year was began in 1930 and ended in 1934
Q. When was civil disobedience movement start
Ans. – Civil disobedience movement start was 1930.
Q. Civil disobedience movement date
Ans. – Civil disobedience movement date was 1930.
Q. When was Civil Disobedience Movement started and ended
Ans. – Civil Disobedience Movement started in 1930 and ended in 1934
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum