সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ pdf | Decline of Sultanate Empire

সুদীর্ঘ ৩০০ বছরের সুলতানি সাম্রাজ্য শক্তিশালী ভিত্তির ওপর স্থাপন হলেও পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। কেবলমাত্র পানিপথের প্রথম যুদ্ধ নয় সুলতানের সাম্রাজ্যের পতনের কারণ (Causes of Decline of Sultanate Empire) হিসেবে বিভিন্ন দিক পরিলক্ষিত হয়।

সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ | Causes of Decline of Sultanate Empire

কুতুবউদ্দিন আইবকের প্রতিষ্ঠিত দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য ৩০০ বছর ধরে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু কারণে ধীরে ধীরে এই সাম্রাজ্যের পতন সংঘটিত হয়।

তাছাড়া ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতানি সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ পতন ঘটে এবং ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার লাভ ঘটে। ১৫২৬ সালের পানিপথের প্রথম যুদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন কারণে এই সুবিশাল সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছিল।

সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ গুলি এখানে উল্লেখ করা হল –

1. সাম্রাজ্যের বিশালতা

প্রায় 300 বছর ধরে সুলতানি সাম্রাজ্যের বিশালতা বা বিস্তার সাধন হয়েছিল। ফলে সম্রাটদের পক্ষে এই সুবিশাল রাজ্য পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

সুলতান আলাউদ্দিন খলজির আমল থেকে সুলতানি সাম্রাজ্য বিশাল আকার ধারণ করে। তাই একজন শাসকের পক্ষে এই সুবিশাল সাম্রাজ্য শাসন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। যার ফলে বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট বিদ্রোহ ও বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। যার ফলে সুলতানের সাম্রাজ্যের পতন ধীরে ধীরে সংঘটিত হয়।

2. উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব

দিল্লি সুলতানি সাম্রাজ্য ছিল অনেকাংশে সুলতানের নেতৃত্ব ও ব্যক্তিগত গুণাবলীর উপর নির্ভরশীল। ফলে উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে সুলতানি সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। অর্থাৎ সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হল উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব।

3. জনসমর্থনের অভাব

জনসমর্থনের অভাব সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনকে অনিবার্য করে তুলেছিল। কারণ দিল্লি সুলতানি শাসকের জনসমর্থনের অভাব ছিল। অর্থাৎ শাসক ও জনগণের মধ্যে বিস্তার দূরত্ব ছিল।

এই শাসনের মূল ভিত্তি ছিল সামরিক শক্তি। কিন্তু শুধুমাত্র সামরিক শক্তির মাধ্যমে কোন সাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসেবে জনসমর্থনের অভাব বিশেষভাবে দায়ী।

4. অর্থনৈতিক কারণ

সুলতানি সাম্রাজ্যের রাজস্ব নীতি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। তাছাড়া সুলতানের সাম্রাজ্যের রাজাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন রাজকোষ ধ্বংস করে দিয়েছিল।

আবার বিশাল সেনাবাহিনীর ভরণ পোষণ এবং বিন তুঘলকের অদূরদর্শিতা রাজ কোষের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। তাছাড়া বারবার বৈদেশিক আক্রমণ ও রাজস্ব লুট সুলতানি সাম্রাজ্যের অর্থনীতি সংকট সৃষ্টি হয়।

এই অবস্থা মোকাবিলা করার জন্য জনগণের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হয়। এর ফলে জনগণের আর্থিক দুর্দশা ব্যর্থ থাকে এবং তারা আন্দোলনে লিপ্ত হয়।

5. বৈদেশিক আক্রমণ

সুলতানি সাম্রাজ্যের বিশালতার কারণে আভ্যন্তরীণ শাসনব্যবস্থা যখন দুর্বল আকার ধারণ করেছিল তখন বহিরাগত আক্রমণ বা বৈদেশিক আক্রমণ এই সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের মুখে পতিত করেছিল।

যেমন – তৈমুর লং ভারতে প্রবেশ করে পাঞ্জাব এবং দিল্লি অঞ্চলে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। তার ধ্বংসযজ্ঞ সুলতানি সাম্রাজ্যের শক্তি ও মর্যাদাকে অনেকখানি বিনষ্ট করেছিল।

তাছাড়া বৈদেশিক আক্রমণের পাশাপাশি রাজ সম্পদ লুট সুলতানি সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে দুর্বল করে তুলেছিল। পরবর্তীকালে ১৫২৬ সালে বাবরের আক্রমণে সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন চিরতরে ঘটে।

6. ক্রীতদাস শাসন

সুলতানি সাম্রাজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল রাজ্য শাসনে ক্রীতদাসদের গুরুত্ব দেন। এর ফলে প্রথম দিকে যোগ্য শাসকের দ্বারা রাজকার্য পরিচালনা হলেও পরবর্তীকালে ক্রীতদাস শাসকরা ছিলেন অলস এবং কর্ম বিমুখ।

তাই ক্রীতদাস কথার জন্য যেমন সুযোগ্য রাজকর্মচারী সৃষ্টি হয়নি তেমনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ও শাসনক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। যা সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনকে অনিবার্য করে তুলেছিল।

7. মোহম্মদ বিন তুঘলকের দায়িত্ব

সুলতানি শাসক বিন তুঘলকের দায়িত্বের ব্যর্থতা ও পরিকল্পনার অভাবকে সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসেবে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন।

বিন তুঘলকের পরিকল্পনার ফলে প্রজাদের দুর্দশা, অভিজাদের অসন্তোষ এবং দেশে আর্থিক সংকট বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ সম্রাট বিন তুঘলকের অদূরদর্শিতা, হঠকারিতা বা হটকারী সিদ্ধান্ত, বিভিন্ন পরিকল্পনার ব্যর্থতা সাম্রাজ্যের সর্বত্র বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে এবং ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ ভারত তার হাতছাড়া হয়ে যায়।

বিন তুঘলকের বিভিন্ন হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এলফিন স্টোন তাকে পাগলা রাজা বলে আখ্যায়িত করেন।

8. হিন্দুদের আনুগত্যের অভাব

সুলতানি শাসনের প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের অসহযোগিতা সুলতানি সাম্রাজ্যের বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। কারণ দিল্লির সুলতানরা কোনো ধর্মীয় সহিষ্ণুতার আদর্শ গ্রহণ করেননি।

এমনকি তারা হিন্দুদের উপর বিভিন্ন কর যেমন জিজিয়া কর ও নানা ধরনের দমনমূলক পর চাপিয়ে দেন। ফলে হিন্দুদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

উপসংহার

সর্বোপরি বলা যায়, বিভিন্ন কারণে ৩০০ বছরের সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ধীরে ধীরে সংঘটিত হয়েছিল। সবশেষে ১৫২৬ সালে বাবর দিল্লির কাছে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে সুলতান ইব্রাহিম লোদীকে পরাস্ত ও নিহত করেন। এই যুদ্ধে জয় লাভের পর সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন হয়।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Causes of Decline of Sultanate Empire
  • Online Sources

প্রশ্ন – দিল্লির সুলতানি শাসনের প্রতিষ্ঠাতা কে

উত্তর – দিল্লির সুলতানি শাসনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন কুতুবুদ্দিন আইবক।

প্রশ্ন – সুলতানি আমলে মুদ্রার নাম কি ছিল?

উত্তর – সুলতানি আমলে বিন তুঘলকের রাজত্বকালে তামার নোটের প্রচলন ছিল। অর্থাৎ সোনারুপার অভাবের জন্য কুবলাই খানের অনুকরণে সুলতান তাম্র মুদ্রার প্রচলন করেন। এই মুদ্রার নাম ছিল দোকানি।

প্রশ্ন – ভারতের শেষ সুলতান কে ছিলেন?

উত্তর – ভারতের শেষ সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদি। কুতুবুদ্দিন আইবকের দ্বারা সুলতানি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই সাম্রাজ্য প্রায় ৩০০ বছর টিকে ছিল।

আরোও পোস্ট পড়ুন

Leave a Comment