আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল | Causes of Civil Disobedience Movement

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের সংকটজনক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করেন। তাই আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল (Causes of Civil Disobedience Movement) ছিল বহুমুখী।

ব্রিটিশ শাসনকালে ব্রিটিশদের দমননীতির বিরুদ্ধে ও তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য গান্ধীজি ১৯৩০ সালে ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় ১১ দফা দাবি পেশ করেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এই দাবিগুলি অস্বীকার করেন। ফলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গান্ধীজীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৯৩০ সালের ১২ মার্চ গান্ধীজি ডান্ডি অভিযান করেন এবং লবণ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন।

আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ | Causes of Civil Disobedience Movement

গান্ধীজীর নেতৃত্বে ১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়। সাধারণভাবে আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ যে সমস্ত দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –

1. ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতি

ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি এবং অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের প্রতি যে অবিচার ও অত্যাচার করেছিল তার ফলশ্রুতি হল আইন অমান্য আন্দোলন। এর ফলে ভারতীয় জনগণএকপ্রকার আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন।

2. ব্রিটিশদের লবণ আইন

ভারতবর্ষে লবণ আইনের ফলে লবণের উপর ব্রিটিশদের একছত্র অধিকার তৈরি হয়। তাছাড়া লবণের উপর কর আরোপ করেছিল। তাই ভারতীয়রা নিজেদের প্রয়োজনে লবণ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়।

তাই গান্ধীজি সবরমতি আশ্রম থেকে ১৯৩০ সালে ৬ই এপ্রিল ডান্ডিতে উপস্থিত হয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন। অর্থাৎ লবণ আইন ভঙ্গের মাধ্যমে গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন।

3. স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি

ভারতের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা বা পূর্ণ স্বরাজ অর্জন করার দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের বিভিন্ন আন্দোলনকে দমননীতির মাধ্যমে বন্ধ করতে চেয়েছিল। ফলে গান্ধীজীর ডাকে সারা ভারতবর্ষের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি আইন অমান্য করেছিল।

4. কুখ্যাত রাওলাট আইন

১৯১৯ সালের রাওলাট আইন অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার সাধারণ ভারতবাসী অধিকার হরণ করেছিল। এই আইন অনুযায়ী যে কোনো ভারতীয়কে বিনা বিচারে গ্রেপ্তার করা ও জেলে রাখা সম্ভব ছিল। এর ফলে ভারতবর্ষের মনে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছিল।

5. বৈষম্য মূলক নীতি

ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষের শাসনকালে ভারতীয়দের উপর বিভিন্ন বৈষম্য সৃষ্টি করতো। যেমন চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয়দের প্রতি বিভিন্ন বৈষম্য মূলক দিকের ফলে ভারতীয়রা গান্ধীজীর ডাকে আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

তাই গান্ধীজির নেতৃত্বে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ এবং অসন্তোষ দানা বেঁধে ছিল তা আইন অমান্য আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকাশিত পায়।

আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি ছিল লবণ আইন ভঙ্গ, কর প্রদানের আইন না মানা, বিভিন্ন সরকারি আইন অমান্য করা, সরকারি দপ্তর বর্জন করা, স্কুল কলেজ বর্জন করা প্রভৃতি।

তাই বিভিন্ন কারণে আইন অমান্য আন্দোলন সূচিত হলেও ব্রিটিশদের দমন নীতির ফলে ১৯৩৪ সালে মে মাসে গান্ধীজি এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এবং তিনি ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহের নির্দেশ দেন।

আইন অমান্য আন্দোলনের প্রভাব | Impact of Civil Disobedience Movement

আইন অমান্য আন্দোলন ব্যর্থ হলেও এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সংগঠিত আইন অমান্য আন্দোলনের প্রভাব বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল –

i) আইন অমান্য আন্দোলনের ফলে ভারতের জাতীয় সংগ্রাম সর্বভারতীয় গণ আন্দোলনের পরিণত হয়েছিল। অর্থাৎ এই আন্দোলনের প্রভাব ও ব্যাপকতা ছিল অনেক বেশি।

ii) আইন অমান্য আন্দোলনের চাপে ব্রিটিশ সরকার গান্ধী আরউইন চুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেসকে সমমর্যাদা দিতে বাধ্য হন।

iii) আইন অমান্য আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিল যে ভারতে তাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। অর্থাৎ ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিল নিছক দমননীতির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে স্থিমিত করা যাবে না। যার ফলে এই আন্দোলনের প্রভাব সারা ভারতবর্ষের ছড়িয়ে পড়ে।

উপসংহার

সর্বোপরি বলা যায়, বিভিন্ন কারণে ইংরেজদের বিরুদ্ধে গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা পর্ব থেকেই ব্রিটিশরা নির্মম দমন নীতির আশ্রয় গ্রহণ করেন। ফলে গান্ধীজি সহ হাজার হাজার আন্দোলনকারী ইংরেজদের হাতে গ্রেফতার হন। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেসকে বেআইনি ঘোষণা করেন।

তাছাড়া ব্রিটিশ সরকারের নির্মম নীতির চাপে গান্ধীজি ১৯৩৪ সালে মে মাসে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেও স্বাধীনতার ইতিহাসে এই আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে নাড়িয়ে দিয়েছিল একথা বলা যায়।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Causes of Civil Disobedience Movement
  • Online Sources

প্রশ্ন – আইন অমান্য আন্দোলনের নেতা কে ছিলেন?

উত্তর – আইন অমান্য আন্দোলনের অন্যতম নেতা হলেন গান্ধীজি। অর্থাৎ গান্ধীজীর নেতৃত্বে ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।

আরোও পোস্ট পড়ুন

আইন অমান্য আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো

আইন অমান্য আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল | Causes of Civil Disobedience Movement পোস্টটি সম্পূর্ণ করার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment