প্রাচীন ভারতের খ্যাতিমান গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্যতম শাসক সমুদ্রগুপ্ত। সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব (Achievements of Samudragupta) প্রতিভা, বাস্তব বুদ্ধি সমুদ্ধ গুপ্তকে সাম্রাজ্য বিস্তার ও খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল।
সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা | Achievements of Samudragupta
গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন প্রথম চন্দ্রগুপ্তের পুত্র এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী। গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিশিষ্ট শাসক সমুদ্রগুপ্ত ৩৪০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৩৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুদীর্ঘ সময় ধরে রাজত্ব করেন। তাই প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে কয়েকজন খ্যাতিমান শাসকের মধ্যে সমুদ্রগুপ্ত হলেন অন্যতম।
অসাধারণ প্রতিভা, দক্ষতা, বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি, বাস্তব বুদ্ধি এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী যথাযোগ্য পথ অনুসরণ ক্ষমতা সমুদ্রগুপ্তকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়
সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা করলে, যে সমস্ত বিশেষ দিক পরিলক্ষিত হয়, তা এখানে উল্লেখ করা হল –
1. সমুদ্রগুপ্তের রাজ্য বিস্তার
সিংহাসনে আরোহন করার পর সমুদ্র গুপ্ত পূর্বপুরুষদের মত রাজ্য বিস্তারে মননিবেশ করেন। সমুদ্র গুপ্ত কৌটিল্যের শত্রু নিধনের আদর্শের নীতিতে প্রভাবিত হয়ে ভারতের বিভিন্ন দিকে রাজ্য বিস্তারে মননিবেশ করেন।
সমগ্র গুপ্তের রাজ্য বিস্তার কয়েকটি দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়, সেগুলি হল –
উত্তর ভারত জয়
সমুদ্রগুপ্ত প্রথমে আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারতের ৯ জন রাজাকে পরাজিত করে নিজের সাম্রাজ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই ৯ জন রাজাদের মধ্যে অন্যতম হলেন – রুদ্রদেব, নাগদত্ত, চন্দ্রবর্মন, নন্দী, বলবর্মন প্রভৃতি।
উত্তর ভারতের রাজাদের পরাজিত করার পর সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের দিল্লি ও পাঞ্জাবের অন্তর্গত কোটা রাজ্য ও মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলাকীর্ণ আটবিক রাজ্যটি গ্রাস করেন।
দক্ষিণ ভারত জয়
উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি জয় করার পর সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি জয়ের দিকে অগ্রসর হন। এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে জানা যায় সমুদ্র গুপ্ত দক্ষিণ ভারতের 12 জন রাজাকে পরাজিত করেছিলেন।
তবে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি জয়লাভ করলেও ভৌগোলিক দূরত্বের কারণে সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের বা নিজের সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেননি। এই রাজ্যগুলিকে তিনি করদান ও আনুগত্যের বিনিময়ে ওইসব রাজ্যের রাজাদের দিয়ে দেন। এটিকে গ্রহণ পরিমোক্ষ হিসাবে পরিগণিত করা হয়।
অন্যান্য রাজ্য জয়
কেবলমাত্র উত্তর ভারত বা দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির পাশাপাশি সমুদ্রগুপ্ত পূর্ব ও পশ্চিম ভারতের সীমান্ত অঞ্চল দখল করেন। তবে এইসব অঞ্চলের রাজারা প্রায় বিনা যুদ্ধে সমুদ্রগুপ্তের বশ্যতা স্বীকার করে নেন। এইভাবে তিনি রাজনৈতিক অনৈক্যের অবসান ঘটিয়ে সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
2. বহুমুখী প্রতিভা
গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্ত ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। অর্থাৎ তিনি কেবল রাজ্য জয় করেননি বা তিনি কেবল শাসক ছিলেন না। বরং সমুদ্রগুপ্ত একজন সুকবি, সঙ্গীতজ্ঞ, ধার্মিক ব্যক্তিত্ব। শাস্ত্রতত্ত্বে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তাই এলাহাবাদ প্রশস্তিতে সমুদ্রগুপ্তকে ‘কবিরাজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
3. সমুদ্রগুপ্তের উপাধি
সমুদ্রগুপ্ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত হন। বিশেষ করে উত্তর ভারতের সব কটি স্বাধীন রাজ্যকে দখল করে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি সর্বরাজোচ্ছেত্তা উপাধি গ্রহণ করেন।
4. সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা
সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বকালে বিভিন্ন মুদ্রা সন্ধান পাওয়া যায়, বিশেষত সোনার মুদ্রা। অর্থাৎ সমুদ্রগুপ্ত ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয় বিক্রয়ের জন্য মুদ্রার প্রচলন করেছিলেন। তাছাড়া গরুড় স্তম্ভ সহ সমুদ্রগুপ্তের মুদ্রা, গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত হয়।
5. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা
সমুদ্রগুপ্ত ব্যক্তিগতভাবে শৈব ধর্মাবলম্বী হলেও অন্যান্য বিভিন্ন ধর্ম যেমন বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি উদার ছিলেন। তাঁর রাজসভায় একাধিক বৌদ্ধ পণ্ডিতদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়াও সমুদ্রগুপ্তের সময়ে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনরুত্থান ঘটে।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, সমুদ্রগুপ্ত কেবলমাত্র সুশাসক ছিলেন না তিনি ছিলেন বিচক্ষণ গুপ্তসম্রাট। অর্থাৎ সমুদ্র গুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা (Achievements of Samudragupta) করলে কেবল তাঁকে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। সামরিক অভিযানের ব্যাপকতা ও আধিপত্যের কারণে ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ সমুদ্রগুপ্তকে ‘ভারতের নেপোলিয়ন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তাছাড়া সমুদ্রগুপ্তের প্রশংসায় বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেছেন – ‘ভারতের ইতিহাসে সমুদ্রগুপ্ত এক অবিস্মরণীয় সম্রাট, ভারতের ইতিহাসে এক নবযুগের স্রষ্টা, সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গঠনের আদর্শ দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন’।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Career and Achievements of Samudragupta
- Online Sources
প্রশ্ন – প্রশ্ন – সমুদ্র গুপ্ত কে ভারতের নেপোলিয়ন বলা হয় কেন
উত্তর – উত্তর – সাম্রাজ্য বিস্তার শেষ করে সমুদ্রগুপ্ত অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। তিনি এর ফলে পরাক্রমাংক উপাধি ধারণ করে। সামরিক অভিযানের ব্যাপকতা ও রাষ্ট্রীয় আধিপত্যের বিস্তৃতি লক্ষ্য করে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ভিন সেন্ট স্মিথ সমুদ্রগুপ্ত কে ভারতের নেপোলিয়ন বলে অভিহিত করেছেন। তবে সমুদ্র গুপ্তের সঙ্গে নেপোলিয়নের মিল থাকলেও তিনি কিন্তু নেপোলিয়নের মত পররাজ্য গ্রাসকারী ছিলেন না।
প্রশ্ন – কাকে ভারতের নেপোলিয়ন বলা হয়
উত্তর – দক্ষ গুপ্ত সম্রাট সমুদ্রগুপ্তকে ভারতের নেপোলিয়ান বলা হয়।
প্রশ্ন – সমুদ্রগুপ্ত দক্ষিণ ভারতে কতজন রাজাকে পরাজিত করেন
উত্তর – এলাহাবাদ প্রশস্তি থেকে জানা যায় সমুদ্র গুপ্ত দক্ষিণ ভারতে 12 জন রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মহেন্দ্র, মন্তরাজ, স্বামীদত্ত, বিষ্ণুগোপ প্রমূখ।
প্রশ্ন – সমুদ্র গুপ্তের দুটি উপাধি কি ছিল
উত্তর – সমুদ্র গুপ্তের দুটি উপাধি ছিল যথাক্রমে সর্বরাজোচ্ছেত্তা ও বিক্রমাঙ্ক।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
সমুদ্রগুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা করো | Achievements of Samudragupta সম্পূর্ণ পোস্টটি করার জন্য ধন্যবাদ।