খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ভারতবর্ষে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর বাধাপীর চালুক্য বংশের প্রধানতম রাজা দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব (Achievements of Pulikeshi 2) ছিল একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব | Achievements of Pulikeshi 2
গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতবর্ষের দাক্ষিণাত্যে তিনটি শক্তিশালী রাজবংশের উদ্ভব ঘটে। এদের মধ্যে অন্যতম হল চালুক্য বংশ। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে দাক্ষিণাত্যের বাতাপিকে কেন্দ্র করে চালুক্য বংশের উত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
Achievements of Pulikeshi 2 in India
প্রথম পুলকেশী চালুক্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেও তাঁর সুযোগ্য পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী ছিলেন চালুক্য বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট। বিশিষ্ট কবি রবিকীর্তির রচিত আইহোল প্রশস্তি বা শিলালিপি থেকে চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্বের কথা জানা যায়। দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব যে সমস্ত দিকে বিস্তৃত, তা এখানে আলোচনা করা হলো –
1. সাম্রাজ্য বিস্তার
দ্বিতীয় পুলকেশী ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। তিনি মহীশুরের গঙ্গরাজ্য, মালাবারের অনুপঅঞ্চল, কোঙ্কনের মৌর্য রাজ্য ও গুজরাট সহ প্রভৃতি রাজ্য জয় করেন। পরবর্তীকালে দক্ষিণ ভারতের পল্লব রাজ প্রথম মহেন্দ্রবর্মনও দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে পরাজিত হন এবং পল্লবদের রাজধানী কাঞ্চি অঞ্চল দ্বিতীয় পুলকেশীর অধিকারে আসে। এরপর দাক্ষিণাত্যের গোদাবলী থেকে কৃষ্ণা নদী পর্যন্ত দ্বিতীয় পুলকেশী রাজ্য বিস্তার করেন।
দ্বিতীয় পুলকেশী কদম্ব রাজ্য ও মহিষুরের গঙ্গা রাজ্য দখল করেন এবং গঙ্গা রাজার কন্যাকে বিবাহ করেন। এইভাবে তিনি চালুক্য রাজ্যের আয়তন ও শক্তি দুই বৃদ্ধি করেছিলেন।
সাম্রাজ্য বিস্তারের শেষ দিকে দ্বিতীয় পুলকেশী আরো একবার পল্লব রাজ্য অভিযান করেন। কিন্তু তিনি প্রথম নরসিংহ বর্মনের কাছে পরাজিত হন। অর্থাৎ মহেন্দ্র বর্মনের পুত্র নরসিংহ বর্মন পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে দ্বিতীয় পুলকেশীকে পরাজিত ও নিহত করেন। এই সময় থেকে দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজত্বের অবসান ঘটে।
2. হর্ষবর্ধনের সাথে যুদ্ধ
দ্বিতীয় পুলকেশীর সামরিক অভিযানের ও রাজ্য বিজয়ের অন্যতম পদক্ষেপ হলো উত্তর ভারতের শ্রেষ্ঠ নরপতি হর্ষবর্ধনের সাথে যুদ্ধ করে সাফল্য লাভ করা। মালব অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের জন্য দ্বিতীয় পুলকেশীর সাথে হর্ষবর্ধনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আইহোল প্রশস্তি থেকে জানা যায় এই যুদ্ধে দ্বিতীয় পুলকেশী জয়লাভ করেছিল।
3. আইনশৃঙ্খলার উন্নতি
দ্বিতীয় পুলকেশী সিংহাসনে আরোহণের সময় রাজ্যে অনেক সমস্যা ছিল এবং শত্রু রাজ্যের সংখ্যা ও ছিল অনেক বেশি। সিংহাসনে বসেই পুলকেশী আইন-শৃঙ্খলা কার্যকর করতে উদ্যোগী হন। তাছাড়া গৃহযুদ্ধের সময় রাজ্যের বিভিন্ন অংশের যে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল একে একে তিনি সেগুলোকে দমন করেন। পরবর্তীকালে আপ্পায়িক ও গোবিন্দ নামক দুই ব্যক্তি চালুক্য দখলের চেষ্টা করলে দ্বিতীয় পুলকেশী তাদের দমন ও নিরস্ত করেন।
4. ধর্মীয় সহিষ্ণুতা
দ্বিতীয় পুলকেশী ছিলেন একজন পরমধর্মসহিষ্ণু শাসক। দ্বিতীয় পুলকেশী ছিলেন একজন পরমধর্মসহিষ্ণু শাসক। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি তার অনুরাগ থাকলেও অন্য ধর্মকেও তিনি ছোট করে দেখতেন না। অর্থাৎ দ্বিতীয় পুলকেশী অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন ছিলেন।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, দ্বিতীয় পুলকেশী কেবলমাত্র শক্তিশালী রাজা ছিলেন তা নয়। তিনি ছিলেন দক্ষিণ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি অসামান্য দক্ষতায় উত্তর থেকে দক্ষিণে চালুক্য রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বিতীয় পুলকেশী বল্লভ, পৃথিবী বল্লভ, পরমেশ্বর প্রভৃতি উপাধি ধারণ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি পারস্য সম্রাট দ্বিতীয় মসরুর রাজসভায় দুত পাঠিয়েছিলেন। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ্ দ্বিতীয় পুলকেশীর শাসন ও দক্ষতা এবং জনহিতকর কাজের প্রশংসা করেন এবং তাকে দক্ষিণ ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজা বলে অভিহিত করেছেন।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Achievements of Pulikeshi 2
- Online Sources
প্রশ্ন – দ্বিতীয় পুলকেশী কোন বংশের রাজা ছিলেন
উত্তর – দ্বিতীয় পুলকেশী বাতাপির চালুক্য বংশের রাজা ছিলেন। তিনি আনুমানিক ৬১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাজত্ব করেন।
প্রশ্ন – আইহোল প্রশস্তি তে কোন রাজার কীর্তি বর্ণনা আছে
উত্তর – আইহোল প্রশস্তিতে বাতাপের চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশীর কীর্তি বর্ণনা রয়েছে।
প্রশ্ন – চালুক্য কাদের বলা হয়
উত্তর – বাতাপি বা বাদামিকে কেন্দ্র করে যে বংশের উত্থান ঘটে তাদের চালুক্য বলা হয়। ইতিহাসে চালুক্যদের চারটি শাখা পাওয়া যায়। সেগুলি হল – i) বাতাপির চালুক্য বা পশ্চিমী চালুক্য বংশ, ii) বেঙ্গির চালুক্য বংশ, iii) কল্যাণের চালুক্য বংশ এবং iv) গুজরাটের চালুক্য বংশ।
প্রশ্ন – আইহোল প্রশস্তি কে রচনা করেন
উত্তর – আইহোল প্রশস্তি রচনা করেন দ্বিতীয় পুলকেশীর অন্যতম সভাকবি রবিকীর্তি। তিনি এই প্রশস্তিতে দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজ্য বিস্তার ও হর্ষবর্ধনের সাথে যুদ্ধে জয়লাভের বিস্তারিত ইতিহাস বর্ণনা করেন। এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত।
প্রশ্ন – হর্ষবর্ধন ও দ্বিতীয় পুলকেশীর লড়াইয়ের ফল কি হয়েছিল
উত্তর – বাংলার শ্রেষ্ঠ দুই নরপতি হর্ষবর্ধন ও দ্বিতীয় পুলকেশীর মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে হর্ষবর্ধনকে পরাজিত করে দ্বিতীয় পুলকেশী জয়লাভ করেন।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum