নেপোলিয়নের উত্থান ও পতন | Rise and Fall of Napoleon Bonaparte

ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃৎ হলেন নেপোলিয়ন। অর্থাৎ নেপোলিয়নের উত্থান ফরাসি বিপ্লবের মাধ্যমে যেমন ঘটেছিল তেমনি পতনও (Rise and Fall of Napoleon Bonaparte) তার সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও আগ্রাসি মনোভাবের ফলে সংঘটিত হয়।

নেপোলিয়নের জন্ম ১৭৬৯ খ্রিঃ কাসিকা দ্বীপের এক প্রান্তিক অভিজাত পরিবারে। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও ফরাসি সরকারের দাক্ষিণ্যে রাজকীয় সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। তাঁর মায়ের নাম ছিল লেটিজিয়া এবং পিতার নাম ছিল কার্লো বোনাপার্ট। তাঁর পিতা পেশায় উকিল ছিলেন। পর্বত-সংকুল কর্সিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ নেপোলিয়নের তরুণ মনে সাহস ও চারিত্রিক দৃঢ়তা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।১৭৭৯-৮৪ সালে ব্রিয়া-র (Brienne) সামরিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলেও তাঁর প্রথম জীবনচরিতকার স্তাঁধাল মন্তব্য করেছেন যে – নেপোলিয়ন পাঠ্যসূচির মধ্যে সমকালীন বুদ্ধিজীবী, হিউম, মস্টেন্ডুর উদারনৈতিক চিন্তাধারার কোনো স্পর্শ পাননি। তবে ভলতেয়ার, মস্তেস্কু, রুশো প্রমুখ দার্শনিকদের রচনা, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত ও দর্শন ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়।

নেপোলিয়নের উত্থান ও পতন | Rise and Fall of Napoleon Bonaparte

ফরাসি বিপ্লবের দ্রুত পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পটভূমিতে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট প্রায় দুই দশক ধরে বিপ্লবের অন্যতম অগ্রণী নায়ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ফ্রান্স সম্রাট নেপোলিয়নের উত্থান ও পতন (Rise and Fall of Napoleon Bonaparte) সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করা হলো।

নেপোলিয়নের উত্থান | The Rise of Napoleon

ফরাসি বিপ্লবের এক সংকট মুহূর্তে ফরাসি জনগণের কাছে নেপোলিয়নের প্রতিভা ও দক্ষতা চমকিত করেছিল। অর্থাৎ নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রণনিপুণ সেনানায়ক।

ইউরোপের ইতিহাসে তিনি এক বর্ণময় রোমান্টিক নায়ক ও কিংবদন্তি পুরুষ। কেবলমাত্র নিজের প্রতিভাবলে তিনি ফ্রান্সের সম্রাট পদ লাভ করেন।

নেপোলিয়নের উত্থান যেমন ছিল বিস্ময়কর, তেমনি অবিশ্বাস্য। ১৭৯৯ থেকে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের ভাগ্যনিয়ন্তা ছিলেন। তাঁর কার্যকলাপের ফলে ফ্রান্স এবং সমগ্র ইউরোপের ইতিহাসে নানা সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন দেখা দেয়।

১৭৮৫ খ্রিঃ সামরিক বিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে তিনি স্থায়ীভাবে কর্সিকা থেকে ফ্রান্সে আশ্রয় নেন।

১৭৯৩ সালের জুন মাসে জ্যাকোবিন দলের অবিসংবাদী নেতা বোরম্পিয়ারের প্রিয়পাত্র হিসাবে ফরাসি গোলন্দাজ বাহিনীর এই অজানা সেনানায়ক বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান। অর্থাৎ প্রথম জীবনে নেপোলিয়ন এক সাধারণ সৈনিক এর জীবন যাপন গ্রহণ করেন।

১৭৯৫ সালের থার্মিজরের অভ্যুত্থানের পর এক অভিজাত মহিলা যোশেফাইনেকে বিবাহ করেন।

পরবর্তীকালে ডিরেকটরি প্রশাসনের মধ্যমণি ব্যারাসের সহযোগিতায় নেপোলিয়ান বিখ্যাত ইটালী অভিযানের সেনানায়ক হিসাবে ১৭৯৬ সালের ১০ মে লোদির যুদ্ধে অস্ট্রিয়া সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করেন ও মিলান নগরীতে ১৭৯৬ সালের মে মাসে ফরাসি সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদে নিযুক্ত হন।

তাছাড়া ডিরেকটরি শাসনের ফলে ফ্রান্স অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত হয়ে নেপোলিয়ানের ইটালী অভিযানের সামরিক গৌরবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

ডিরেকটরি প্রশাসনের অন্যতম প্রবক্তা কার্গো নেপোলিয়ানের উপর নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যর্থ হন নেপোলিয়ানের অসাধারণ জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ নানাবিধ সংকট ও প্রশাসনিক দুর্নীতি স্বাভাবিকভাবেই নেপোলিয়ানের রাজনৈতিক উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছিল।

১৭৯৫ সালের নেপোলিয়ানের ইটালী অভিযানের প্রাক্কালে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এক অগ্নিগর্ভ সংকটে পরিণত হয়।

অবাধ মূল্যস্ফীতি একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের দুঃখ ও অভাবকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল, চোর, ডাকাত ও ভবঘুরের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল অন্যদিকে দুর্নীতিপরায়ণ কিছু বুর্জোয়ার হাতে প্রচুর অর্থসম্পদ জমেছিল।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দক্ষিণপন্থী রাজতন্ত্রী ও উন্নাবামপন্থী আন্দোলনের চাপে ডিরেকটরি শাসনের ভারসাম্য বিনাস হয়। নেপোলিয়ান সেই সুযোগ গ্রহণ করে ১৭৯৬ সালে প্রথম কনসাল ও ১৮০৪ সালে সরাসরি সম্রাট পদে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

নেপোলিয়ান ১৭৯৯-১৮০৪ পর্যন্ত কনসাল হিসাবে এবং ১৮০৪-১৮১৫ সাল পর্যন্ত সম্রাট হিসাবে ফ্রান্স শাসন করেছিলেন।

নেপোলিয়নের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও গৌরবময় কীর্তি হল তাঁর ‘আইন সংহিতা’ বা ‘কোড নেপোলিয়ন’ (‘Code Napoleon’)। এতদিন পর্যন্ত ফ্রান্স ও বিভিন্ন প্রদেশে কোনও সাধারণ আইনবিধি প্রচলিত ছিল না। অর্থাৎ সমগ্র ফ্রান্সে কোনও আইনগত ঐক্য ছিল না।

তাই নেপোলিয়নের উদ্যোগে ফ্রান্সের চারজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে গঠিত এক কমিশন চার বছরের (১৮০০-১৮০৪ খ্রিঃ) অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে একটি আইনবিধি সংকলন করে। আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মোট ৮৪টি অধিবেশন বসে।

নেপোলিয়নের পতন | Fall of Napoleon France

নেপোলিয়ন তার ক্ষমতা ও প্রতিভা বলে দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্রান্স শাসন করলেও বিভিন্ন কারণে ধীরে ধীরে তার পতন ঘটে। নেপোলিয়নের পতনের কারণ গুলি হলো –

i) স্বৈরাচারী শাসন

ii) পোপের প্রতি দুর্ব্যবহার

iii) সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা

iv) মহাদেশীয় অবরোধ

v) স্পেনীয় ক্ষত

vi) মস্কো অভিযান এবং

vii) ইউরোপের শক্তি জোট

নেপোলিয়নের পতনের কারণ বিস্তারিত পড়ুন।

উপসংহার

সর্বোপরি বলা যায়, ফরাসি বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে শাসক হিসাবে নেপোলিয়ানের ভূমিকা প্রসঙ্গে ইংরেজ ঐতিহাসিক ফিসার বলেছেন – “নেপোলিয়ানের সামরিক বিজয় ক্ষণস্থায়ী হলেও তাঁর প্রাশাসনিক সংস্কার গ্রানাইট প্রস্তরের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। অসামরিক শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় বহু গুণের অধিকারী ছিলেন নেপোলিয়ান। কল্পনা, উদ্ভাবনা শক্তি, প্রশাসনের সকল ব্যাপারে যত্ন ও নিরলস কর্মপ্রচেষ্টা ফরাসি বিপ্লবোত্তর প্রশাসনিক শূন্যতাকে দক্ষতার সঙ্গে পুরুণ করে ছিলেন।”

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Rise and Fall of Napoleon Bonaparte
  • Online Sources

প্রশ্ন – নেপোলিয়ন কোন দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন

উত্তর – নেপোলিয়নের জন্ম ১৭৬৯ খ্রিঃ কাসিকা দ্বীপের এক প্রান্তিক মধ্যবিত্ত পরিবারে। অর্থাৎ ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট ইতালির অন্তর্গত ভূমধ্যসাগরের কর্সিকা দ্বীপের অ্যাজাকসিও নামক স্থানে ফরাসি জাতির নায়ক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন – আমি বিপ্লব কে বলেছিলাম?

উত্তর – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন – আমিই বিপ্লব ও আমিই আবার বিপ্লবকে ধ্বংস করেছি।

প্রশ্ন – নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর নাম কি?

উত্তর – নেপোলিয়নের সেনাবাহিনীর নাম ছিল ‘লা গ্র্যান্ডে আর্মি’ (‘দ্য গ্রেট আর্মি’)।

আরোও পোস্ট পড়ুন

নেপোলিয়নের উত্থান ও পতন | Rise and Fall of Napoleon Bonaparte পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment