মুঘল সাম্রাজ্যের অন্যতম সম্রাট হলেন আকবর। আকবর রাজত্ব বিস্তার ও সুশাসন বজায় রাখার জন্য রাজপুত নীতি (Rajput Policy of Akbar) গ্রহণ করেন।
রাজপুতদের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন ভারতের মুঘল শাসনের এক অন্যতম দিক। কারণ দিল্লির সুলতানগনের স্থানীয় শাসকের অধিকাংশ ছিলেন রাজপুত। তাই মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শাসক রাজপুত নীতি গ্রহণ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আকবর।
সম্রাট আকবরের রাজপুত নীতি | Rajput Policy of Akbar
মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তারের ক্ষেত্রে আকবর সিংহাসনে বসার পর একের পর এক রাজ্য জয় করেন। যেমন তিনি বৈরম খাঁর নেতৃত্বে আজমির, গোয়ালিয়র এবং জৈনপুর জয় করেন। পরবর্তীকালে মধ্যপ্রদেশের মালব ও গন্ডয়ানা আকবর দখল করেন।
রাজপুত নীতির প্রেক্ষাপট
গন্ডোয়ানার পর সম্রাট আকবর রাজপুতনা জয় করার মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সময় ভারতে রাজপুতরা ছিল শৌর্যবীর্যে শক্তিশালী। তাছাড়া রাজপুতদের সাহায্য ছাড়া ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি শক্তিশালী করা সম্ভব নয়।
এই কারণে আকবর রাজপুতদের সঙ্গে যুদ্ধ না করে বন্ধুত্বের নীতি গ্রহণ করেন। অর্থাৎ আকবরের রাজত্বকালে রাজপুত নীতি পূর্ণতা লাভ করে।
তাই সম্রাট আকবর প্রথমেই জয়পুর ও বিকানি রাজ্যের রাজকন্যাদের বিবাহ করে রাজপুত্রের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
বিহারীমল, মানসিংহ, টোডরমল, ভগবান দাস প্রভৃতি রাজপুত বীরদের সাম্রাজ্যের উচ্চপদে নিয়োগ করেন। এবং রাজপুতদের উপর থেকে বিভিন্ন কর তুলে নেন। ফলে বিকানি, বুঁদি, জয়সলমীর প্রভৃতি রাজপুত রাজ্যগুলি আকবরের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
রাজপুর নীতির বাস্তবায়ন বা রূপায়ণ
সম্রাট আকবরের রাজপুত নীতির বাস্তবায়ন বা রূপায়ণ বিভিন্নভাবে সংঘটিত হয়েছিল। অর্থাৎ সম্রাট আকবর রাজপুত নীতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেগুলি হল
প্রথমত – রাজপুত পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন। এক্ষেত্রে অম্বর রাজ পরিবারের সঙ্গে আকবর প্রথম বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন
দ্বিতীয়ত – রাজপুতদের বিভিন্ন দায়িত্বশীল উচ্চ প্রশাসনিক পদে নিযুক্ত করা।
তৃতীয়ত – রাজপুতদের উপর থেকে বিভিন্ন কর তুলে নেওয়া।
চতুর্থত – মিত্র রাজপুত রাজ্যগুলির আভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা বজায় রাখা।
পঞ্চমত – রাজপুত ছাড়াও অন্যান্য হিন্দুদের প্রতি উদার মনোভাব গ্রহণ। যেমন – কোনো অঞ্চলে বিদ্রোহ ঘটলে সেখানকার নারী ও শিশুদের দাসে পরিণত করা ও ইসলামে ধর্মান্তরিত করার রীতি আকবর নিষিদ্ধ করেন। তাছাড়া ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর জিজিয়া কর উচ্ছেদ করেন।
রাজপুত নীতির প্রভাব
মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তারের ক্ষেত্রে আকবরের রাজপুত নীতির বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। কারণ রাজপুতদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে দিল্লির সুলতানগণ আর্থিক ও সামরিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
তা ছাড়া রাজপুত বিরোধিতা সুলতানি সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ। সেই কারণে মুঘল সম্রাট আকবর রাজপুতদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে মিত্রতা নীতি গ্রহণ করে।
বিশিষ্ট ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র রায় বলেছেন – মুঘলরা জমিদারদের অর্থাৎ স্থানীয় শাসকদের খুশি করতে চেয়েছিলেন। আনুগত্য ও সেবার ক্ষেত্রে রাজপুতদের সুনাম সম্পর্কে আকবর সচেতন ছিলেন এবং এটি তার রাজপুত নীতি নির্ধারণের প্রাথমিক ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়
সুতরাং সদ্য প্রতিষ্ঠিত মুঘল সাম্রাজ্য কে স্থায়ীভাবে টিকিয়ে রাখার জন্য আকবর সঙ্গে বিরোধিতা পরিহার করে মিত্রতা গ্রহণ করার দিকে গুরুত্ব আরোপ করে।
রাজপুত নীতির বিরোধিতা
সম্রাট আকবরের রাজপুত নীতি বা মিত্রতা নীতি মেবারের রানা উদয় সিংহ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। আকবর মেবারে রাজধানী চিতোর অবরোধ করলে উদয় সিংহ পালিয়ে যায়।
উদয় সিংহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রানা প্রতাপ সিংহ মুঘলদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেন। কিন্তু ১৫৭৬ সালের হলদিঘাটের যুদ্ধে রানাপ্রতাপ বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হয়। এর ফলে চিতোরের পতন ঘটালেও রানাপ্রতাপ আকবরের বশ্যতা স্বীকার করেননি।
রানাপ্রতাপ বন জঙ্গল থেকে দীর্ঘকুড়ি বছর মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান এবং মৃত্যুর পূর্বে চিতোর ছাড়া মেবারের অধিকাংশ এলাকায তিনি পুনরুদ্ধার করেন।
তাছাড়া রানাপ্রতাপের পুত্র অমর সিংহকেও আকবর পরাজিত করতে ব্যর্থ হন। কিন্তু আকবর জয়সলমীর, মাড়োয়ার প্রভৃতি রাজ্যগুলি দখল করেন।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তারের জন্য আকবর শক্তিশালী রাজপুতদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক ও বিভিন্ন মিত্রতা নীতি গ্রহণ করে রাজত্ব বিস্তার করেছিল। তাছাড়া বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে আকবরের সময়কালে রাজপুত নীতি পরিপূর্ণতা লাভ করে।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Rajput Policy of Akbar
- Online Sources
প্রশ্ন – সম্রাট আকবরের রাজপুত নীতি কি ছিল
উত্তর – সম্রাট আকবরের রাজপুত নীতি ছিল শক্তিশালী রাজপুতদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ না গিয়ে রাজত্ব বিস্তারের জন্য তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতি গ্রহণ করা, রাজপুতদের উপর থেকে বিভিন্ন কর তুলে নেওয়া ও রাজপুতদের সাম্রাজ্যের বিভিন্ন উচ্চপদে নিয়োগ করা।
প্রশ্ন – আকবরের প্রধান সেনাপতির নাম কি?
উত্তর – আকবরের প্রধান সেনাপতির নাম হল বৈরাম খাঁ। আকবর তার প্রধান সেনাপতির বা একপ্রকার অভিভাবক বৈরাম খাঁয়ের নেতৃত্বে প্রাণীপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে জয় লাভ করে ও মুঘল সাম্রাজ্যের বিস্তার সাধন করেন।
প্রশ্ন – আকবরের পুরো নাম কি?
উত্তর – আকবরের পুরো নাম হল মির্জা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ আকবর।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum