গৌতম বুদ্ধ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক হিসেবে গৌতম বুদ্ধ সারা বিশ্বে স্মরণীয়। গৌতম বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত জীবনী (Biography of Gautama Buddha) এখানে উল্লেখ করা হল।
গৌতম বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত জীবনী | Biography of Gautama Buddha
গৌতম বুদ্ধ ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক। তিনি আজীবন শান্তির মহৎ বাণী প্রচার করে গেছেন। গৌতম বুদ্ধ কোনো সাধারণ ঘরের সন্তান ছিলেন না। তিনি ছিলেন রাজ বংশের সন্তান।
রাজকীয় সমস্ত রকমের সুখ ও ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়ে নির্বাণ লাভের বা মুক্তি লাভের জন্য গৃহ ত্যাগ করেছিলেন। এখানে গৌতম বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হল।
গৌতম বুদ্ধের জন্ম এবং শৈশবকাল
গৌতম বুদ্ধ আনুমানিক ৫৬৬ খ্রিস্টাবূর্বাব্দে ভারতবর্ষের কপিলাবস্তু নগরের লুম্বিনী গ্রামে শাক্যবংশের রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এটি বর্তমানে নেপালে অবস্থিত।
গৌতম বুদ্ধের পিতা ছিলেন শাক্যবংশের রাজা। তার নাম ছিল শুদ্ধোদন। গৌতম বুদ্ধের মায়ের নাম ছিল মায়া দেবী। জন্মের সময় গৌতম এর নাম রাখা হয় সিদ্ধার্থ।
গৌতম বুদ্ধের জন্মের মাত্র ৭ দিন পরেই তাঁর মা মারা যান। তিনি বিমাতা গৌতমীর কাছে বড় হন। এই জন্য পরবর্তীকালে তার নাম হয় গৌতম।
গৌতম বুদ্ধের জন্ম | গৌতম বুদ্ধ আনুমানিক ৫৬৬ খ্রিস্টাবূর্বাব্দে ভারতবর্ষের কপিলাবস্তু নগরের লুম্বিনী গ্রামে শাক্যবংশের রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এটি বর্তমানে নেপালে অবস্থিত। |
গৌতম বুদ্ধের মৃত্যু | গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে ভারতের উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে দেহত্যাগ বা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। |
গৌতম বুদ্ধের পিতার নাম | শাক্যবংশের রাজা শুদ্ধোদন |
গৌতম বুদ্ধের মাতার নাম | মায়া দেবী |
গৌতম বুদ্ধের স্ত্রীর নাম | যশোধরা |
গৌতম বুদ্ধের পুত্রের নাম | রাহুল |
সংসার ত্যাগ
গৌতম বুদ্ধ মাত্র ২৯ বছর বয়সে নিভৃত রাতে সমস্ত রাজকীয় সুখ ও ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়ে নির্বাণ লাভের জন্য গৃহত্যাগী হয়েছিলেন। এমনকি তার স্ত্রী যশোধরা এবং ৮ দিনের ফুটফুটে শিশুসন্তান রাহুলকে ত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবনের কঠিন ব্রত গ্রহন করেন। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থে এই ঘটনাটিকে মহাভিনিষ্ক্রমণ বলা হয়।
বোধি লাভ বা নির্বাণ লাভ
গৌতম বুদ্ধ সংসার ত্যাগের পর কঠোর তপস্য্যায় ব্রতী হন। দীর্ঘদিন তপস্যার পর তিনি জীবনের অর্থ বুঝতে পারেন এবং জন্ম-মৃত্যুর রহস্য ভেদ করতে সক্ষম হন। । ৩৫ বছর বয়সে তিনি বোধি বা দিব্য জ্ঞান লাভ করেন।
বোধি লাভের পর তার নাম হয় বুদ্ধ বা বুদ্ধদেব বা তথাগত। যার অর্থ হল যিনি পরম জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছেন। যে গাছের তলায় বসে তিনি বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন সেই বৃক্ষের নাম হয় বৌদ্ধ বৃক্ষ। আর যে স্থানে তিনি বৌদ্ধত্ত্ব অর্জন করেন পরবর্তীকালে তার নাম হয় বুদ্ধগয়া।
ধর্ম প্রচার
বুদ্ধত্ব লাভের পর তিনি বারাণসীর নিকটবর্তী সারোনাথে তার সঙ্গে থাকা যে পাঁচজন ভিক্ষুক ছেড়ে গিয়েছিলেন তাদের কাছে সর্বপ্রথম ফিরে আসেন এবং ধর্ম প্রচার করেন। এই ঘটনা ধর্মচক্র প্রবর্তন নামে খ্যাত।
পরবর্তীকাল সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে গৌতম বুদ্ধ উত্তর ও পূর্ব ভারতের নানা জায়গায় ধর্ম প্রচার করেন এবং অসংখ্য মানুষকে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করেন।
মগধ সাম্রাজ্যের রাজা বিম্বিসার, কৌশল রাজা প্রসেনজিৎ প্রমূখ গৌতম বুদ্ধের উল্লেখযোগ্য শীর্ষ।
বুদ্ধদেবের মূল বাণী হল – মানুষের জীবন দুঃখ এবং যন্ত্রণাময়। তাই মানুষকে দুঃখ থেকে নিবৃত্তি লাভের উপায়ের সন্ধান দেওয়া এবং সত্য উপলব্ধি করা বৌদ্ধ ধর্মের একমাত্র লক্ষ্য।
বুদ্ধদেব মানুষের দুঃখ যন্ত্রণাময় জীবন থেকে মুক্তি লাভের জন্য চারটি আর্য সত্য এবং অষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা বলেন। যেগুলিকে পাথেয় করে তিনি মানুষকে মুক্তির পথ বা নির্বাণ লাভের পথ বলে দিয়েছিলেন।
গৌতম বুদ্ধ বলেন – মানুষের জীবনের দুঃখ কষ্টের মূল কারণ হল অবিদ্যা বা অশিক্ষা। তাই তিনি মানুষকে দুঃখ কষ্ট থেকে মুক্তি লাভের উপায় বা নির্বাণ লাভের উপায় বলে দেন।
গৌতম বুদ্ধের মতে – চারটি আর্য সত্য হল
i) মানবজীবনে দুঃখ-কষ্ট আছে
ii) দুঃখ কষ্টের কারণ আছে
iii) দুঃখের নিবারণ সম্ভব
iv) দুঃখ নিবৃত্তির উপায় বা পথ আছে
গৌতম বুদ্ধ দুঃখ নিবারণের উপায় বা পথ হিসেবে অষ্টাঙ্গিক মার্গের কথা উল্লেখ করেছেন। এই মার্গ গুলি হল –
১. সম্যক দর্শন বা দৃষ্টি
২. সম্যক সংকল্প
৩. সম্যক বাক্য
৪. সম্যক কর্ম
৫. সম্যক জীবনযাপন
৬. সম্যক প্রয়াস
৭. সম্যক স্মৃতি
৮. সম্যক সমাধি
মহাপরিনির্বাণ
গৌতম বুদ্ধ ৮০ বছর বয়সে ভারতের উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে দেহত্যাগ বা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর শিষ্যগণ বৌদ্ধ ধর্ম ও তার শিক্ষাকে সংরক্ষণ ও প্রচার করেন।
উপসংহার
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
- Biography of Gautama Buddha
প্রশ্ন – গৌতম বুদ্ধ কোথায় জন্মগ্রহণ করেন কোন বংশে
উত্তর – বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের কপিলাবস্তু নগরের লুম্বিনী গ্রামে শাক্যবংশের রাজপরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যা বর্তমানে নেপালে অবস্থিত। তিনি অল্প বয়সে রাজকীয় সুখ ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়ে দুঃখ থেকে মুক্তি লাভের জন্য কঠোর সাধনা করেন।
প্রশ্ন – গৌতম বুদ্ধ কোথায় দেহত্যাগ করেন
উত্তর – গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের উত্তরপ্রদেশের কুশীনগরে দেহত্যাগ বা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
প্রশ্ন – গৌতম বুদ্ধের স্ত্রীর নাম কি
উত্তর – গৌতম বুদ্ধের স্ত্রীর নাম ছিল যশোধরা। গৌতম বুদ্ধ তার আট দিনের শিশু সন্তান রাহুলকে ও তার স্ত্রীকে রেখে নির্বাণ লাভের জন্য রাজকীয় সমস্ত সুখ ও ঐশ্বর্য বিসর্জন দিয়ে গৃহত্যাগ করেন।
প্রশ্ন – গৌতম বুদ্ধ কোথায় মারা যান
উত্তর – গৌতম বুদ্ধ ভারতবর্ষের উত্তর প্রদেশের কুশীনগরে মারা যান বা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
গৌতম বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত জীবনী | Biography of Gautama Buddha – পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।