ব্রিটিশ অধিকৃত ব্রহ্মদেশের রাজধানী রেঙ্গুনের পতন হলে ভারতের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার সুনিশ্চিত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ক্রিপসকে ভারতে পাঠিয়ে ক্রিপস মিশন (Cripps Mission) তৈরি করেন।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জাপানের অগ্রগতিতে ব্রিটিশদের একের পর এক অধিকৃত অঞ্চল হাতছাড়া হয়ে যায়। তাছাড়া ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন অসন্তোষ দেখা দিতে শুরু করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ক্রিপস মিশন বা ক্রিপস প্রস্তাব পেশ করেন।
ক্রিপস মিশন | Cripps Mission
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জাপানের অগ্রগতিতে ব্রিটিশ অধিকৃত ব্রহ্মদেশের রাজধানী রেঙ্গুনের পতন হলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিরাপত্তা বিষয়ে ব্রিটিশরা চিন্তিত হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করার জন্য বৃটেনের চার্চিল মন্ত্রিসভা ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসকে ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতে পাঠান।
১৯৪২ সালের ২২ শে মার্চ ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার বিশিষ্ট সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস দিল্লিতে এসে পৌঁছান। তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগসহ অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে আলোর আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করেন। এটি ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত।
ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব
ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ক্রিপস মিশনের প্রস্তাবগুলি হল নিম্নলিখিত –
i) যুদ্ধের অবসানে বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতকে কানাডার মত ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেওয়া হবে।
ii) নতুন সংবিধান অনুসারে ভারতের যেকোনো প্রদেশ বা দেশীয় রাজ্য ইচ্ছা করলে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও থাকতে পারবে।
iii) ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সভা গঠন করা হবে এবং এই সভাকে একটি নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেয়া হবে।
iv) ভারতীয় প্রদেশগুলোর প্রাদেশিক আইনসভা সংবিধানসভা সদস্যদের নির্বাচন করবে। তাছাড়া অন্যদিকে দেশীয় রাজ্যের রাজারা তাদের সদস্যদের মনোনীত করতে পারবে।
v) ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের হাতে বহাল থাকবে.
vi) বড়লাটের কার্যনির বাহক কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘ভিটো’ ক্ষমতার অধিকার বড়লাটের থাকবে।
ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা
ক্রিপস মিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবগুলি মূলত ছিল ব্রিটিশ সরকারের পক্ষপাতিত্বে। ফলে ভারতীয়দের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হয়েছিল। ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতার কারণগুলি হল –
i) ভারতের প্রতিরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের হাতে রেখে দিয়েছিল। অর্থাৎ প্রতিরক্ষার পূর্ণ দায়িত্ব ভারতীয়দের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কোন ইচ্ছা ব্রিটিশ সরকারের ছিল না।
ii) ক্রিপস প্রস্তাবে ভারতীয়দের স্বাধীনতা দেওয়ার কোনো কথা বলা হয়নি।
iii) প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারকে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সমমর্যাদা ও ক্ষমতা দেয়ার কোন প্রতিশ্রুতি ছিল না।
তাই বিভিন্ন কারণে কংগ্রেস ক্রিপস প্রস্তাবগুলি মেনে নেয় নি। তাছাড়া 1942 সালের 10 এপ্রিল কংগ্রেস সভাপতি মৌলানা আজাদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে – মন্ত্রিসভার দায়িত্বভার সম্পন্ন জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত না হলে কংগ্রেসের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
ক্রিপস মিশন কংগ্রেসের এই প্রস্তাবে পরিহাস করে বলেছিলেন – ক্রিপস প্রস্তাব হল একটি ফেল করা (Crushing Bank) ব্যাংকের উপর আগামী দিনের চেক।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, ক্রিপস প্রস্তাব ছিল সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে ভারতীয়দের কানাডার মতো মর্যাদা দেয়ার কথা বলা হলেও তা ছিল ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে। তাছাড়া ভারতের প্রতিরক্ষা দায়িত্ব ব্রিটিশ সরকারের হাতে ন্যস্ত ছিল। তাই কংগ্রেস এই প্রস্তাবগুলিকে মেনে নেয়নি। ফলে পরবর্তীকালে গান্ধীজি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেন।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – ক্রিপস মিশন কবে গঠিত হয়
উত্তর – ক্রিপস মিশন ১৯৪২ সালের ২২ শে মার্চ ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার বিশিষ্ট সদস্য ও ব্রিটিশ আইনজ্ঞ স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এর নেতৃত্বে গঠিত হয়।
প্রশ্ন – ক্রিপস মিশন কত সালে ভারতে আসে
উত্তর – ক্রিপস মিশন ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে ভারতে আসে।
প্রশ্ন – ক্রিপস মিশনের সদস্য কারা ছিলেন
উত্তর – স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ছাড়া ক্রিপস মিশনের সদস্য ছিলেন জাতীয়বাদী কংগ্রেস নেতামহাত্মা গান্ধী, মৌলানা আজাদ এবং মুসলিম লীগের সদস্য মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্য।
প্রশ্ন – ক্রিপস মিশন যখন ভারতে আসে তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন
উত্তর – ক্রিপস মিশন যখন ভারতে আসে তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল।
প্রশ্ন – ক্রিপস মিশনের প্রধান কে ছিলেন
উত্তর – ক্রিপস মিশনের প্রধান ছিলেন স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস।
Q. Cripps mission date
Ans. – Cripps mission date 22 March1942.
Q. Cripps mission year
Ans. – Cripps mission year in 1942.
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum