ব্রিটিশ সরকারের দমনমূলক শাসন নীতি, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ও বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। যেগুলি প্রাথমিকভাবে অসহযোগ আন্দোলনের কারণ (Causes of Non Cooperation Movement) হিসেবে গণ্য করা হয়।
অসহযোগ আন্দোলনের কারণ | Causes of Non Cooperation Movement
অসহযোগ আন্দোলনের কারণ হিসেবে ব্রিটিশ সরকারের দমন নীতিকে দায়ী করা হয়। তবে এছাড়াও অসহযোগ আন্দোলনের কারণ হিসেবে যে সমস্ত দিকগুলি পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল নিম্নলিখিত –
1. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব
১৯১৪ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে অসহযোগ আন্দোলনের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার যুদ্ধের সময় ভারতের অর্থ, সম্পদ ও সৈন্যকে নির্বিচারে ব্যবহার করে।
এইজন্য ভারতীয়দের বহু কষ্ট স্বীকার করতে হয় এবং ভারতীয়রা আশা করেছিলেন যে যুদ্ধের শেষে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বায়ত্ত্বশাসন দেবে। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসন না দেওয়ার ফলে ভারতবাসীদের মনে ক্ষোভ জমা হয়েছিল।
2. রাওলাট আইন
বৃটিশ সরকারের কুখ্যাত রাওলাট আইন অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের দ্বারা প্রবর্তিত ১৯১৯ সালের রাওলাট আইন অনুসারে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজন ভারতীয়দের গ্রেফতার করতে পারতো। অর্থাৎ এই আইন অনুসারে বিনা বিচারে ভারতীয়দের গ্রেপ্তার এবং আটক রাখার অনুমতি ছিল। এটির বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী ও অন্যান্য নেতারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল।
পরবর্তীকালে এর প্রতিবাদস্বরূপ গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন।
3. খিলাফত আন্দোলন
১৯১৯ সালের খিলাফত আন্দোলনের সমর্থনে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে খেলাফত আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন।
4. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড
1919 সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ফলে ভারতবাসীর মনে ইংরেজদের সম্পর্কে বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। অর্থাৎ এই জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ফলে পুরো পাঞ্জাব প্রদেশে পাঞ্জাব অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল।
5. মন্টেগু চেমস ফোর্ড আইন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নানা কারণে ১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার বা ভারত সরকার আইন ব্রিটিশ সরকার দ্বারা প্রণীত হয়। কিন্তু নানা কারণেই এই আইনের বিভিন্ন দিক ভারতীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ফলে পরবর্তীকালে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।
অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল
১৯২০ সালে গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা ঘটনার পর ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু তা সত্ত্বেও অসহযোগ আন্দোলনের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী, যেমন –
i) অসহযোগ আন্দোলনের ফলে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি নতুন অধ্যায় সূচনা হয়।
ii) অসহযোগ আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকৃত গণ আন্দোলনে পরিণত হয়।
iii) অসহযোগ আন্দোলনের ফলে দেশে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছিল। যেমন – এর ফলে দেশীয় শিল্পের বিস্তার লাভ ঘটে এবং অন্যদিকে সরকারের শুল্ক আদায়ের পরিমাণ হ্রাস পায়।
iv) অসহযোগ আন্দোলন সামাজিক দিক থেকে ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনের ফলে সমাজের জাত পাত ব্যবস্থার অবসান ঘটেছিল। ফলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ দলে দলে এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
v) এই আন্দোলনের ফলে ইংরেজ সরকারের ওপর জনগণের ভয় ও বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। তাই স্বাভাবিক কারণে ইংরেজদের দমন নীতি জনগণের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ভাঙতে ব্যর্থ হয়।
তাই অসহযোগ আন্দোলন প্রসঙ্গে ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন – এই আন্দোলন কিছুটা সফল ও কিছুটা ব্যর্থ হয়েছিল।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন শাসন নীতির ফলে ভারতবর্ষের মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছিল। যার ফলে গান্ধীজি যখন এই অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন তখন দলে দলে মানুষ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগদান করে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তবে চৌরিচৌরা ঘটনার পর গান্ধীজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে, অনেক আন্দোলনের নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে যাই হোক এই আন্দোলনের ফলে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। কারণ এই আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রকৃত গণ আন্দোলনের পরিণত হয়েছিল।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি কারণ কি কি?
উত্তর – অসহযোগ আন্দোলনের তিনটি কারণ হল – জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব ও কুখ্যাত রাওলাট আইন।
প্রশ্ন – গান্ধীজী কেন অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছিলেন?
উত্তর – দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজদের ভারতীয়দের উপর দমন নীতির বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন কারণে ভারতের স্বাধীনতা স্বাদ পেতে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দীর্ঘদিন ধরে চলা ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে।
প্রশ্ন – অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের কারণ কি ছিল?
উত্তর – অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের কারণ হল – উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা ঘটনার পর ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯২২ সালে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum