ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এই পলাশী যুদ্ধে (Battle of Plassey) -র কারণ ও ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
১৮৫৭ সালের ২৩ শে জুন মুর্শিদাবাদের ২৩ মাইল দূরে পলাশীর প্রান্তরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ইংরেজদের সাথে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে পলাশীর যুদ্ধ (Battle of Plassey) সংঘটিত হয়। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের মাত্র ৮০০ ইংরেজ সেনার কাছে সিরাজউদ্দৌলার ৬০০০০ সৈন্য পরাজিত হয়েছিল। তাই এই যুদ্ধ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ হিসাবে পরিগণিত হয়।
পলাশীর যুদ্ধের কারণ | Causes of the Battle of Plassey
১৮৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর প্রান্তরে ব্রিটিশদের সঙ্গে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার মধ্যে যে পলাশীর যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল তার পশ্চাতে বিভিন্ন কারণ পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধের কারণ গুলি হল –
প্রথমত – আলীবর্দির মৃত্যুর পর তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজ-উদ-দৌলা বাংলার নবাব হন। কিন্তু প্রথম থেকেই ইংরেজদের সঙ্গে মতান্তরের কারণে পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত করেছে।
দ্বিতীয়ত – সিংহাসনে বসার পর ইংরেজরা প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী সিরাজ-উদ-দৌলাকে কোনো উপঢৌকন পাঠাননি। এর ফলে সিরাজ ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট হয়।
তৃতীয়ত – সিরাজ-উদ-দৌলা জানতে পারে যে, ইংরেজরা সিরাজের প্রতিদ্বন্দ্বী সৌকত জঙ্গকে সাহায্য দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি করেন। এর ফলে নবাব ইংরেজদের বিরুদ্ধে অসন্তুষ্ট হন।
চতুর্থত – ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় বিনাশ হল কে যে বাণিজ্যিক অধিকার লাভ করেছিল তা কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যবহার করতে দিলে তারা তা অপব্যবহার শুরু করে। এর ফলে দেশীয় ব্যবসায়ীরা ও নবাব অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন।
সিরাজ-উদ-দৌলা কোম্পানির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি দাবি করেন যে কোম্পানি দস্তকের অপব্যবহার করবে না। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিরাজদৌলার প্রতিশ্রুতিতে রাজি হয়নি। ফলে সিরাজ-উদ-দৌলা ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হন।
এইসব কারণে নবাব ইংরেজদের শাস্তি দেওয়ার জন্য কলকাতা আক্রমণ করে 1756 খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ সহ কলকাতা দখল করে নেন এবং আলীবর্দীর নাম অনুসারে কলকাতা শহরের নতুন নামকরণ করেন আলিনগর হিসেবে।
কিন্তু পরবর্তীকালে ১৭৫৭ সালে ইংরেজ কর্মচারী রবার্ট ক্লাইভ এবং ইংরেজ নৌ সেনাপতি ওয়াটসন মাদ্রাজ থেকে এসে কলকাতা পুনরুদ্ধার করেন। ফলে সিরাজ বাধ্য হয়ে ইংরেজদের সঙ্গে সন্ধি করেন যা আলিনগরের সন্ধি নামে পরিচিত।
তাছাড়া আলিনগরের সন্ধি ইংরেজরা বেশিদিন মানেন নি। নবাবের নিষেধ থাকা সত্ত্বেও ইংরেজরা ফরাসিদের চন্দননগর কোটি দখল করে নেন। এবং তাছাড়া ইংরেজরা ভিতরে ভিতরে মীরজাফরকে নবাব করার জন্যষড়যন্ত্র শুরু করেন। এই সংবাদে সিরাজ-উদ-দৌলা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন এবং বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য এগিয়ে যান।
পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল
বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সঙ্গে ইংরেজদের পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু বিরাট সেনাবাহিনী নিয়েও সিরাজউদ্দৌলা কিছু বিশ্বাসঘাতকের জন্য যুদ্ধে হেরে যান। আরে এই যুদ্ধের ফলাফল মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। পলাশী যুদ্ধের ফলাফল -এর যে সমস্ত বিশেষ দিক পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল –
1. বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কোনমতে প্রাণ নিয়ে মুর্শিদাবাদের ফিরে আসেন এবং সিংহাসন চ্যুত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে তাকে বন্দী করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
2. পলাশীর যুদ্ধের জয়লাভের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ইংরেজ সৈন্য ক্লাইভ বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসান। অর্থাৎ পলাশী যুদ্ধের ফলাফল হল ইংরেজদের শাসন কায়েম হওয়া।
3. পলাশীর যুদ্ধ ইংরেজিতে জয়লাভের পর বাংলায় ইংরেজিদের বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। অর্থাৎ ইংরেজরা বাধায় তারা ভারতবর্ষে তাদের রাজত্ব কায়েম করে। অর্থাৎ পলাশী যুদ্ধের পর ইংরেজরা প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে ক্ষমতার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
4. পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজরা মীরজাফরকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতেন। ফলে মীরজাফর ইংরেজদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিল।
5. পলাশী যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলা থেকে ফরাসিরা বিতাড়িত হয় এবং তাদের মনোভাব ভেঙে যায়। তাই তৃতীয় কর্নাটকের যুদ্ধে ফরাসিরা শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়।
6. পলাশীর যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার বলেছেন – পলাশীর যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের মধ্যযুগের অবসান হয় এবং আধুনিক যুগের সূচনা হয়।
উপসংহার
সর্বোপরি বলা যায়, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিশাল সেনাবাহিনী থাকা সত্ত্বেও নবাবের দুই সেনাপতি মীরজাফর ও রায়দুর্লভ -এর ষড়যন্ত্র এবং মিরমর্দানের ইংরেজদের গোলার আঘাতে মৃত্যুর পর বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর সিরাজের অবস্থার সুযোগ নিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। ফলে সিরাজের যুদ্ধ বন্ধের আদেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবাবের সেনাবাহিনীর ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং কোনমতে সিরাজ-উদ-দৌলা প্রাণ নিয়ে মুর্শিদাবাদের ফিরে আসেন।
ইংরেজদের যুদ্ধ জয় লাভ হয় এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ক্লাইভ মীরজাফরের নতুন নবাব বলে ঘোষণা করেন। কয়েকদিনের মধ্যে বাংলার নবাব সিরাজদৌলাকে মীরজাফর বন্দী করেন এবং তাকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে এসে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
তথ্যসূত্র (Sources)
- Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
- Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
- Online Sources
প্রশ্ন – পলাশীর যুদ্ধ কত সালে হয়
উত্তর – ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে জুন পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
প্রশ্ন – পলাশীর যুদ্ধ কোথায় হয়েছিল
উত্তর – পলাশীর যুদ্ধ মুর্শিদাবাদের ২৩ মাইল দূরে পলাশীর প্রান্তরে পলাশীর আম বাগানের সংগঠিত হয়েছিল।
প্রশ্ন – পলাশীর যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল
উত্তর – পলাশীর যুদ্ধ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বা ইংরেজিদের সাথে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে সংঘটিত হয়েছিল।
প্রশ্ন – পলাশীর যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?
উত্তর – পলাশী যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব ছিলেন আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলা।
Q. Who won the Battle of Plassey
Ans. The British East India Company won the Battle of Plassey.
প্রশ্ন – আলিনগরের সন্ধি কত সালে হয়
উত্তর – ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারি ইংরেজদের সঙ্গে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলার মধ্যে আলিনগরের সন্ধি হয়।
আরোও পোস্ট পড়ুন
- লেখ্যাগারের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ | 8 Main Types of Archives
- লেখ্যাগারের কার্যাবলী আলোচনা | Function of Archives in History
- লেখ্যাগার বা মহাফেজখানা কাকে বলে | Archives in History
- সংগ্রহশালার গুরুত্ব আলোচনা করো | 10 Importance of Museum
- সংগ্রহশালার প্রদর্শন নীতি আলোচনা করো | 10 Museum Exhibition Policy
- সংগ্রহশালার কার্যাবলী আলোচনা | 8 Main Function of Museum
This is very 👍