চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কাকে বলে | চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল | Permanent Settlement 1793

ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে রাজস্ব বা কর আদায়ের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেছিলেন। তাদের মধ্যে একটি অন্যতম হল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (Permanent Settlement)।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কাকে বলে | Permanent Settlement

ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনকালে হেস্টিংয়ের পর লর্ড কর্নওয়ালিস গভর্নর জেনারেল হয়ে নিযুক্ত হন। তিনি রাজস্ব ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলা দূর করার জন্য ভারতীয় জমিদারদের সঙ্গে ১০ বছরের জন্য চুক্তি করেন যেটি দশসালা বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।

পরবর্তীকালে ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের জন্য লর্ড কর্নওয়ালিস যে ব্যবস্থা চালু করেন সেটিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা বলে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল আধুনিক ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ভারতবর্ষে পরবর্তীকালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক গতিধারা প্রবাহিত হয়েছিল।

এই ব্যবস্থা অনুসারে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার জমিদার শ্রেণী বংশানুক্রমিকভাবে জমির মালিকানা ভোগ করবে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা। যেখানে কৃষকদের কর সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ছিল। তাই পরবর্তীকালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিভিন্ন সুফল ও কুফল পরিলক্ষিত হয়।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কিছু সুফল বর্তমান ছিল। সেগুলি হল –

1. কোম্পানির নিশ্চিত আয়

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি সুনিশ্চিত আয় এর পরিকল্পনা সার্থক করে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের একটি স্থায়ী আয় সুনিশ্চিত হয়। তাছাড়া এতদিন পর্যন্ত কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের যে অনিশ্চয়তা ছিল তার অবসান ঘটে।

2. মূলধন সংগ্রহ

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ভারতে ইংরেজরা তাদের ব্যবসার জন্য মূলধন সহজে যোগাড় করতে পারত। অর্থাৎ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ফলে সংগৃহীত অর্থ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার বাণিজ্যিক বিনিয়োগের মূলধন সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।

3. জমিদার শ্রেণীর উত্থান

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদার শ্রেণীর উত্থান ঘটে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ভারতের রাজকীয় অনুগ্রহপুষ্ট একটি অভিজাত সম্প্রদায়ের জমিদার শ্রেণী গড়ে ওঠে এবং এই জমিদার শ্রেণি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান সমর্থক ছিলেন।

4. সরকারি আয় বৃদ্ধি

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আয় স্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এর মাধ্যমে জমি থেকে সরকারের আয় ক্রমশ বাড়তে থাকে।

5. জনহিতকর কাজ

এই বন্দোবস্তের ফলে জমিদাররা স্থায়ীভাবে জমিদারি লাভ করে। ফলে জমিদাররা বিভিন্ন জনহিতকর সংস্কার মূলক কাজে মনোযোগী হন।

বিশিষ্ট ঐতিহাসিক মার্শম্যান চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল সম্পর্কে বলেছেন – “It was a bold, brave and wise measure.”

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্রিটিশ ও জমিদার শ্রেণীর কাছে সুফল হলেও সাধারণ কৃষকদের কাছে এটি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল গুলি হল নিম্নলিখিত –

i) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে একদিকে জমিদার আদায়কারী ও মধ্যস্বত্ব ভোগীরা বিশেষ লাভবান হন। ফলে কৃষক শ্রেণীর মানুষেরা বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হন।

ii) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফল হল এর মাধ্যমে জমিদার শ্রেণীর জমিদারি ও জমিদারদের আয় বৃদ্ধি পেলেও সরকারি আয় বৃদ্ধি পায়নি।

iii) এই ব্যবস্থার ফলে বিনা পরিশ্রমে অপর্যাপ্ত আয়ের অধিকারী হওয়ার ফলে জমিদাররা বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া তারা জমির প্রতি উদাসীন ছিলেন এবং নিজেদের ইচ্ছামত জমি বিক্রি করতেন। ফলে দরিদ্র কৃষকদের অবস্থা আরো খারাপ হতে শুরু করে।

iv) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে উদ্ভূত অর্থনৈতিক শোষণ বা অত্যাধিক রাজস্ব কর আদায় এবং অত্যাচার এই দুই এর মধ্যে পড়ে কৃষকদের অবস্থা আরোও শোচনীয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ কৃষকেরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এর ফলে মাঝে মাঝে তারা বিদ্রোহের পথে বা আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়।

উপসংহার

পরিশেষে বলা যায়, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত (Permanent Settlement) ভূমির রাজস্ব সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলেও এর বিভিন্ন কুফল ও সুফল বর্তমান ছিল। তবে বিভিন্ন কুফল থাকা সত্ত্বেও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনেকাংশে সাফল্য লাভ করে। রাজা রামমোহন রায়, মার্শম্যান ও রমেশ চন্দ্র মজুমদার প্রমূখ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে গ্রহণ করেন।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Permanent Settlement 1793
  • Permanent Settlement in Bengal
  • Online Sources

প্রশ্ন – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি

উত্তর – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হল ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস দ্বারা ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার ভূমিকর ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধান সূত্র। এর মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সহজে কৃষকদের কাছ থেকে জমিদারদের মাধ্যমে সরাসরি ভাবে রাজস্ব বা কর আদায় করতে পারত।

প্রশ্ন – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে প্রবর্তন করেন

উত্তর – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস।

প্রশ্ন – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে চালু করেন

উত্তর – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন লর্ড কর্নওয়ালিস।

প্রশ্ন – চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে কবে প্রবর্তন করেন

উত্তর – ভারতবর্ষের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের জন্য ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।

প্রশ্ন – চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষকরা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?

উত্তর – চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষকরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অর্থাৎ অর্থনৈতিক শোষণ বা অত্যাধিক রাজস্ব কর আদায় এবং অত্যাচার এই দুই এর মধ্যে পড়ে কৃষকদের অবস্থা আরোও শোচনীয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ কৃষকেরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।

আরোও পোস্ট পড়ুন

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কাকে বলে | চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল | Permanent Settlement 1793 এই পোস্টটি সম্পন্ন করার জন্য ধন্যবাদ।

Leave a Comment