26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস বক্তব্য | 26 January Republic Day Speech

২৩ শে জানুয়ারি ভারতবর্ষের মহান নেতা নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনের পর ভারতবাসীর কাছে যে দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় সেটি হল 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস (26 January Republic Day)।

ভারতবর্ষে ২৬ শে জানুয়ারি প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে একটি গৌরবময় দিন। এই দিনে বিভিন্ন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে, স্কুল-কলেজে স্মরণ করা ও পালন করা হয়ে থাকে। ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন সন্ধ্যায় দেশের রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।

প্রজাতন্ত্র দিবস মানে কি

ইংরেজি শব্দ “Republic” বা প্রজাতন্ত্র শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ “res publica” থেকে, যার অর্থ হল “জনগণ-সংক্রান্ত বিষয়”। সাধারণ ভাবে রাজশক্তিবিহীন রাষ্ট্রকেই প্রজাতন্ত্র বলা হয়। এখানে দেশের প্রতিটি নাগরিক জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার পেয়ে থাকে।

প্রজাতন্ত্র দিবস এর ইতিহাস

1929 সালে লাহোরে জহরলাল নেহেরুর সভাপতি কে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে পূর্ণ স্বরাজের দাবি গৃহীত হয়। লাহোর কংগ্রেস অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয় যে – ইংরেজরা স্বাধীনতা দিক বা নাইবা দিক, পরের বছর থেকে ২৬ শে জানুয়ারি কংগ্রেসের নেতৃত্বে সারা ভারত জুড়ে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস এই ২৬ শে জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস রূপে পালন করেছে।

তাছাড়া ২৬ শে জানুয়ারির ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ১৯৫০ সালে এই দিনটিতে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর করা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এবং সেখান থেকে প্রতিবছর ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়।

প্রজাতন্ত্র দিবস কেন পালিত হয়

প্রজাতন্ত্র দিবস প্রতিটি ভারতবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই প্রজাতন্ত্র দিবস প্রতি বছর 26শে জানুয়ারী বিশেষ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে এবং দিল্লিতে শোভাযাত্রার মাধ্যমে পালিত হয়।

এই দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয়, কারণ 1950 সালে, এই তারিখে, ভারতের সংবিধান কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এই দিনটি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়ার জন্য ভারতের দীর্ঘ পথ অতিক্রান্ত করে। এটি হল গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব এবং ভারতীয় জনগণের স্থায়ী চেতনার উদযাপনের উৎসব।

তাই প্রতিবছর ২৬শে জানুয়ারি দিনটিকে ভারতের স্বাধীনতা দিবস রূপে পুরনো মর্যাদা দিতে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়

26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস বক্তব্য | 26 January Republic Day Speech

২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে স্কুল কলেজে বা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এখানে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা ও দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস বক্তব্য বা বক্তৃতা বা প্রজাতন্ত্র দিবস রচনা কেমন হবে তা এখানে উল্লেখ করা হল –

উপস্থিত সবাইকে শুভ সকাল (Good morning to everyone)।

আজ, আমি আমাদের দেশের ইতিহাসের একটি বিশেষ স্মরণীয় দিন প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই। আজকের আমরা এই ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করছি, যেটি ১৯৫০ সালে এই দিনটিতে সংবিধান কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

প্রতিবছর আসে আবার প্রতিবছর চলেও যায়। আমরা প্রতিবছর এই ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করে থাকি। এই প্রজাতন্ত্র দিবস কেবলমাত্র ছুটির দিন নয়। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণ বা সংবিধান রচনার স্মরণের দিন নয়। বরং এই দিনটির মহত্ব আরো অনেক বেশি ও তাৎপর্যপূর্ণ।

এই ২৬শে জানুয়ারি দিনটিতে ভারতের সংবিধান শুধু গৃহীত হয়নি। এই সংবিধান আমাদের দেশের ভিত্তি স্থাপন করে এবং নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যের রূপরেখা দেয়। এটি একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে ভারতের প্রতিষ্ঠাকে নির্দেশ করে।

এই 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস দিনটিতে আমরা ভারতের স্বাধীনতা এবং এর গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অক্লান্ত লড়াই করা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং নেতাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করি এবং সম্মান করি।

ভারতের সংবিধান হল বিশ্বের যেকোনো সার্বভৌম দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ-লিখিত সংবিধান। এই সংবিধানটি রচনার ক্ষেত্রে যার অবদান সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তিনি হলেন ডক্টর বি.আর. আম্বেদকর।

এই সংবিধানের মাধ্যমে ধর্ম, জাতি, বর্ণ বা লিঙ্গ নির্বিশেষে তার সকল নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার যেমন – সমতা, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। তাই এটি একটি জীবন্ত দলিল যা বছরের পর বছর ধরে দেশের প্রতিটি ভারতীয় নাগরিককে সুরক্ষিত এবং ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে।

২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস সমগ্র ভারত জুড়ে অত্যন্ত উত্সাহের সাথে পালিত হয়। এই মূল অনুষ্ঠানটি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বর্ণাঢ্য মাধ্যমে অনুষ্ঠানের এবং কুচকাওয়াজ ভারতের সামরিক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে।

তাছাড়া দেশজুড়ে স্কুল, কলেজ এবং এবং অন্যান্য জনসম্প্রদায় পতাকা উত্তোলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বক্তৃতার মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করে থাকেন। তাই এই দিনটিকে আমরা আজ বিশেষভাবে স্মরণীয় এর মাধ্যমে প্রতিটি ভারতবাসীর এক ঐক্য বন্ধন স্থাপনে নিজেদেরকে সমর্পণ করি।

তাই শুধুমাত্র ২৬ শে জানুয়ারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন নয়। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের সংবিধান বুঝতে এবং দেশের আইনকে সম্মান করতে এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ অনুসরণ করি।।

তাই এই 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস এর প্রাক্কালে আমাদের শপথ হওয়া উচিত যে, আমরা আমাদের সহনশীলতা, ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের মূল্যবোধকে জাগ্রত রাখতে রাখতেও সচেষ্ট হবো। যেটি আমাদের সমগ্র জাতির অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

উপসংহার

সর্বোপরি 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস (26 January Republic Day) আমাদের সমগ্র জাতির গর্ব এবং উদযাপনের দিন। এটি আমাদের জাতীয় অতীতকে স্মরণ করার দিন, আমাদের বর্তমানকে উদযাপন করার দিন এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হওয়ার দিন। আসুন আমরা সবাই আমাদের দেশের উন্নতির জন্য একত্রে কাজ করার এবং আমাদের সংবিধানে উল্লেখিত বিভিন্ন মূল্যবোধগুলিকে অক্ষুন্ন রাখার অঙ্গীকার করি।

ধন্যবাদ। নমস্কার।

তথ্যসূত্র (Sources)

  • Allaby, R. G. (2016) “Evolution .“Encyclopedia of Evolutionary Biology”. Ed. Kliman, Richard M. Oxford: Academic Press,19–24.
  • Boyd, Brian. (2017) “Archaeology and Human-Animal Relations: Thinking through Anthropocentrism.” Annual Review of Anthropology 46.1, 299–316. Print.
  • Online Sources

প্রশ্ন – প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে দুটি বাক্য

উত্তর – প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে দুটি বাক্য হল –
i) ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করছি, যেটি ১৯৫০ সালে এই দিনটিতে সংবিধান কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ii) ২৬শে জানুয়ারি দিনটিতে ভারতের সংবিধান শুধু গৃহীত হয়নি। এই সংবিধান আমাদের দেশের ভিত্তি স্থাপন করে এবং নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্যের রূপরেখা দেয়। এটি একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে ভারতের প্রতিষ্ঠাকে নির্দেশ করে।

প্রশ্ন – 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস কেন পালন করা হয়

উত্তর – 26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস কেন পালন করা হয়, কারণ 1950 সালে, 26 শে জানুয়ারি তারিখে ভারতের সংবিধান কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এই দিনটি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়ার জন্য ভারতের দীর্ঘ পথ অতিক্রান্ত করে। এটি হল গণতন্ত্র, সার্বভৌমত্ব এবং ভারতীয় জনগণের স্থায়ী চেতনার উদযাপনের উৎসব।

আরোও পোস্ট পড়ুন

Leave a Comment